জাতীয় উদ্যোগে দেশের পোশাক কারখানা মূল্যায়ন কার্যক্রমের প্রাথমিক পরিদর্শন কর্মসূচি শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে বিস্তারিত প্রকৌশল মূল্যায়নের (ডিইএ) মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট ত্রুটি শনাক্তের প্রয়োজন রয়েছে এমন আড়াই শতাধিক কারখানা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। ডিইএর মাধ্যমে এসব কারখানার স্থাপত্য ত্রুটি শনাক্ত ও পরবর্তীতে এসব ত্রুটির কারেকটিভ অ্যাকশন প্ল্যান (সিএপি) বা সংশোধনে রূপকল্প উন্নয়ন প্রয়োজন হবে। এ কাজগুলো করতে সম্প্রতি ৩২টি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে তালিকাভুক্ত করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ডিইএ সম্পাদনের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। এ উদ্যোগে সাড়া দেয়া ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করে ডিআইএফইর স্থাপত্য-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স বা টাস্কফোর্স অন স্ট্রাকচারাল ডিইএ। এর মধ্যে সরেজমিন যাচাই-বাছাই শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করে টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্স অন স্ট্রাকচারাল ডিইএর জন্য তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সলিউশন, ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড, ইকিউব ডিজাইন, টার্বো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, আইডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, অসপিশাস, এমকে এন্টারপ্রাইজ, ইনফিনিটি কনস্ট্রাকশন, সেফটি কনসালট্যান্ট বিডি, শহিদুল্লাহ এন্ড নিউ অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, সেফটি সোর্স লিমিটেড, প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড ও কনসেপ্ট ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড অ্যাসোসিয়েটস। এদিকে কারখানার অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ডিইএ ও সিএপি সম্পাদনের জন্য টাস্কফোর্স অন ফায়ার এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ডিইএ/সিএপি প্রাথমিকভাবে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করে। এর মধ্যে সরেজমিন যাচাই-বাছাই শেষে গত মাসে ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে তালিকাভুক্ত করে টাস্কফোর্স। ফলে স্থাপত্য, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ডিইএ ও সিএপির দুই টাস্কফোর্স মিলিয়ে মোট ৩২টি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ডিইএ ও সিএপি সম্পাদনে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-বিডি টেকনোলজি, ব্যুরো ভেরিটাস (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেড, হিউম্যান প্রপার্টিজ, প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েটস, সিমপ্লেক্স ফায়ার সেফটি সলিউশন্স, নাজবেল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি, জেনেসিস টেকনোলজিস, কাপেল্লা কনসাল্টিং সার্ভিসেস, ইকিউএমএস কনসাল্টিং, টার্বো ইঞ্জিনিয়ারিং, পারফেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং, মায়েয়াশাহ কনসাল্টিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সিস্টেমস, সেফটি কনসালট্যান্টস বিডি, পারভেজ রানা ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন, জিটেক সাপোর্টস, একলেকটিক, এসএম এন্টারপ্রাইজ, টেক্স টেক ইঞ্জিনিয়ারিং ও নোভেলটি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন।
জানা গেছে, সরকারের তালিকাভুক্তি রক্ষায় এসব প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানকে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচিত প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলী চাকরি ছেড়ে গেলে একই যোগ্যতাসম্পন্ন প্রকৌশলী নিয়োগ করে ডিআইএফইকে তা তাৎক্ষণিকভাবে অবগত করতে হবে। এর অন্যথা হলে প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি বাতিল করা হবে বলেও শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় উদ্যোগে মূল্যায়নকৃত কোনো কারখানার সঙ্গে ডিইএ সম্পাদনে চুক্তির ক্ষেত্রে তা ডিআইএফইকে লিখিতভাবে অবহিত করার শর্তও রয়েছে। ডিইএ সম্পাদন শেষে সংশ্লিষ্ট কারখানার প্রয়োজনীয় রেট্রোফিট বা রেমিডিয়েশন ডিজাইন ডিইএ প্রতিবেদনসহ দাখিল করতে হবে। রেমিডিয়েশন কার্যক্রম সম্পাদন শেষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে রেমিডিয়েশন সনদ প্রদান করতে হবে। আর তালিকাভুক্ত প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানগুলোর গৃহীত কার্যক্রমের অগ্রগতির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন মহাপরিদর্শকের কাছে দাখিলের শর্তও রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের পাশাপাশি পোশাক খাত মূল্যায়নে রয়েছে সরকারের জাতীয় উদ্যোগ। দেশের মোট ১ হাজার ৫৪৯ কারখানা এ উদ্যোগের আওতায় রয়েছে। প্রাথমিক পরিদর্শনের পর কারখানাগুলোকে ঝুঁঁকির মাত্রাভেদে গ্রিন, ইয়োলো, অ্যাম্বার ও রেড শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। প্রাথমিক পরিদর্শনে মোট ৩১৯টি কারখানাকে অ্যাম্বার শ্রেণীভুক্ত করা হয়। এসব কারখানাকে ডিইএ ও সিএপি বাস্তবায়নসাপেক্ষে উৎপাদন সচল রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলোর মালিকপক্ষের গড়িমসিতে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে চলছে ধীরগতি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ডিআইএফইর নেতৃত্বে অনুমোদিত প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান থেকে ডিইএ সম্পন্ন করার তৎপরতা চলছে। ডিইএ পদক্ষেপের মাধ্যমে কারখানা ভবনগুলোর ‘অ্যাজ বিল্ট’ নকশা নিরূপণ করতে হচ্ছে। পরীক্ষা করতে হচ্ছে ভবনের তলদেশের মাটিও। আবার কংক্রিট পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি যাচাই করা হবে ভবনের কলামের সামর্থ্য।