আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতেই অন্তত ৩৬ লাখ ৬০ হাজার দক্ষ লোকের দরকার। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে এই খাতের জন্য দরকার পড়বে ৫৩ লাখ দক্ষ লোকের। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের হিসাবে পোশাক খাতে দক্ষ লোক ছিল ২২ লাখ ৫৮ হাজার।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ‘বাংলাদেশে শ্রমবাজার এবং দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সচিবালয়ে ২৩ জুলাই প্রতিবেদনটির মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রতিবেদনটি করা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ‘কর্মসংস্থান বিনিয়োগ কর্মসূচির জন্য দক্ষতা’ (এসইআইপি) শীর্ষক কর্মসূচির আওতায়।
নয়টি খাতের ওপর জরিপ করে মূল প্রতিবেদন তৈরি করা হলেও পোশাক খাতের অংশটি নিয়ে নেতৃত্ব দেন বিআইডিএসের গবেষক রুশিদান ইসলাম রহমান ও ইকবাল হোসেন। পরিদর্শন করা হয় চার শতাধিক কর্মী থাকা ১০টি কারখানা। এর মধ্যে ঢাকার ছয়টি, নারায়ণগঞ্জের তিনটি ও গাজীপুরের একটি কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচটি নিট, চারটি ওভেন ও একটি সোয়েটার।
মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অন্য খাতের তুলনায় পোশাক খাতের অবদানই সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ১১ দশমিক ৩ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, কর্মসংস্থান তৈরিতেও এই খাতের অবদান ভালো। অথচ দক্ষ, এমনকি আধা দক্ষ মানবসম্পদেরও সবচেয়ে বেশি অভাব পোশাক খাতে এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবই এ জন্য দায়ী।
ভারত ও শ্রীলঙ্কা শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করেছে, কিন্তু তা পোশাক খাতের জন্য খুব একটা কাজের নয়
প্রতিবেদনে বলা হয়, তৈরি পোশাক খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দক্ষ ২২ লাখ ৫৮ হাজার, আধা দক্ষ ১২ লাখ ৩০ হাজার এবং অদক্ষ লোকের চাহিদা ছিল ৬ লাখ ১৮ হাজার। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতের জন্য ৩৬ লাখ ৬০ হাজার দক্ষ, ১৩ লাখ ৪৫ হাজার আধা দক্ষ এবং ৪ লাখ ৪০ হাজার অদক্ষ লোকের দরকার পড়বে। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই খাতে দক্ষ ৫৩ লাখ, আধা দক্ষ ১৮ লাখ এবং অদক্ষ লোকের দরকার পড়বে ৬ লাখ।
বড় কারখানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করে বিআইডিএসের গবেষক দল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে ৭০ শতাংশ কারখানা নিজেদের মতো করে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তবে এগুলো শুধু মৌলিক প্রশিক্ষণ (বেসিক ট্রেনিং) এবং অগ্নিনিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ। ২০২০-২১ অর্থবছরের মধ্যে পোশাক খাতে ১৫ লাখ ৪৭ হাজার এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে ২১ লাখ ৩৬ হাজার লোকের প্রশিক্ষণের দরকার পড়বে। বলা হয়, ২০১৬ সালের পর যেসব পোশাক কারখানা গড়ে উঠেছে, তাদের জন্য প্রশিক্ষণের চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়।
দক্ষ, আধা দক্ষ এবং অদক্ষ—এই তিন শ্রেণির মধ্যে পোশাক খাতে ভবিষ্যতে দক্ষ শ্রমিকের বেশি দরকার তো পড়বেই, ঘাটতি আছে এমনকি বর্তমানেও—প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়। মোট শ্রমশক্তির ঘাটতির মধ্যে দক্ষদের ঘাটতিই ৬৭ শতাংশ।
বিআইডিএসের এই প্রতিবেদনে পোশাক খাতের ওপর হওয়া ভিন্ন চারটি প্রতিবেদনের উদাহরণ টেনে বলা হয়, এই খাতের ভাবমূর্তি অতটা আকর্ষণীয় নয় বলে তরুণেরা উচ্চপদেও চাকরি করতে আগ্রহী হন না।
২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদনের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের পোশাক খাত যত দ্রুত বড় হচ্ছে, সেই তুলনায় দক্ষ শ্রমশক্তি বাড়ছে না। পাঁচ বছরেই এই খাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে ৮০ থেকে ১০০ শতাংশ।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত ও শ্রীলঙ্কা তাদের শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশও ২০১১ সালে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি গ্রহণ করেছে, কিন্তু এই নীতিটা পোশাক খাতের জন্য খুব একটা কাজের কিছু নয়। সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোতেও পোশাক খাতের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কিছু বলা থাকে না।