প্রধান রপ্তানি খাত পোশাক শিল্পে গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে অন্য সব পণ্যের হাত ধরে রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে গত অর্থবছরের (২০১৬-১৭) নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্মেলন কক্ষে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পরিসংখ্যান প্রকাশে এ তথ্য জানা যায়। ইপিবির ভাইস চেয়ার বিজয় ভট্টাচার্যসহ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রধান রপ্তানি আয়ে স্বস্তি না থাকলেও ছোট ছোট অন্য খাতগুলোর রপ্তানি আয় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। এগুলোর মধ্যে কেমিক্যাল খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.২১ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে হয়েছে ৬.২৯ শতাংশ, পাট ও পাটজাত খাতে হয়েছে ৪.৬৬ শতাংশ, পাদুকায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ, প্রকৌশল পণ্যে ৩৫ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকার সুবিধা জিএসপি না থাকলেও প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩১.৪০ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ শতাংশের বেশি। গত অর্থবছরের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৬৯ শতাংশ। আর সিংহভাগ রপ্তানি আয়ের খাত পোশাকের প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। এ সময় ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ডলার। এ আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫.৮৫ শতাংশ কম। একক মাস হিসেবে অর্থবছরের শেষে জুন মাসে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিও কম হয়েছে, যা ১৫.২৭ শতাংশ কম। এ সময় মোট আয় হয়েছে ৩০৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬.৫২ শতাংশ কম। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
সংবাদ সম্মেলনে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, প্রধান রপ্তানি আয়ের খাত পোশাকের বিশ্ববাজার মন্দা। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের চলে যাওয়া বা ব্রেক্সিট, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের প্রভাবসহ নানা কারণে পোশাকসহ মোট রপ্তানিতে একটা প্রভাব ফেলেছে। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি না হলেও খুব একটা কমেনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। কেননা রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রাই একটু বেশি ধরে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এদিকে প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমছে অনেক দিন ধরেই। চলতি বছরে ধারাবাহিকভাবে কয়েক মাস ধরে উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এ উদ্বেগের মধ্যেই সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে প্রবৃদ্ধি গত ১৫ বছরের সর্বনিম্ন হারে এসে ঠেকেছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাকের ওভেনের আয় গত অর্থবছরের তুলনায় ২.২৫ শতাংশ কমেছে।
এ প্রসঙ্গে বিজএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির কালের কণ্ঠকে বলেন, পোশাক খাত গত ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে সংকটপূর্ণ সময় অতিক্রম করছে। এ খাতে আন্তর্জাতিক বাজারের দরপতনসহ সংস্কারের কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া টাকার বিপরীতে ডলারের দাম কমায় প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এ খাত সক্ষমতা হারাচ্ছে। তাই আমরা আগামী ২ বছরের জন্য উেস কর থেকে পোশাক খাতকে অব্যাহতি দেওয়া এবং সব বাজারে ৫ শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনা ও করপোরেট কর কমানোর জোর দাবি জানিয়েছি সরকারের কাছে।