অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তৈরি পোশাক রফতানিতে উৎসে কর হার কমানো হচ্ছে। ২৮ জুন জাতীয় সংসদে দেয়া বাজেটের সমাপনী বক্তব্যেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ বহাল থাকবে বলে জানিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রীর অনঢ় অবস্থানের পর রফতানিকারকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এর তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, ১৫ বছরের মধ্যে রফতানি প্রবৃদ্ধি সর্বনিন্ম পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। ঠিক এ অবস্থায় উৎসে কর বাড়ানো হলে এ খাতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে আসবে। বাধাগ্রস্ত হবে রফতানি। পরে প্রধানমন্ত্রী উৎসে কর কমানোর নির্দেশ দেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পরে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৭০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠায়। অর্থমন্ত্রী ১০ জুলাই সারসংক্ষেপে অনুমোদন করেন। এটি এখন ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অপেক্ষায়। আগামী সপ্তাহের শুরুতে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। একই সঙ্গে জারি করা হচ্ছে পোশাক শিল্পের কর্পোরেট কর কমানোর প্রজ্ঞাপনও।
এনবিআর সূত্র জানায়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে পোশাক শিল্পের উৎসে কর দশমিক ৭০ শতাংশ ছিল। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রফতানিকারকদের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুবিধা দেয়া হয়। প্রজ্ঞাপনের মেয়াদ শেষ এবং নতুন করে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আইনানুযায়ী ৩০ জুনের পর তৈরি পোশাক খাতের উৎসে কর এক শতাংশে গিয়ে ঠেকে। এবারের বাজেটেও অর্থমন্ত্রী উৎসে কর নিয়ে কোনো রকম নির্দেশনা দেননি। সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে এনবিআরের কাছে বিজিএমইএ’র করা আবেদনেরও কোনো সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক মন্দা ও ট্রাম্প প্রশাসনের কারণে ১৫ বছরের মধ্যে পোশাক খাতে সর্বনিন্ম প্রবৃদ্ধি হয়েছে। শিল্পের বর্তমান সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে উৎসে কর হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই। এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পোশাক খাত রফতানির বাজারে কিছুটা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয় আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় আয় হয়েছে তিন হাজার ৪৮৩ কোটি ডলার। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১৭ কোটি ডলার কম। আলোচ্য সময়ে পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছে ২ হাজার ৮১৪ কোটি ডলার, যা এ খাতের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এর মধ্যে নিট খাত থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫ কোটি ডলার। আর ওভেন থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৪৩৯ কোটি ডলার। পোশাক রফতানি থেকে প্রায় ৩ হাজার ৩৮ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। বিজিএমইএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম প্রবৃদ্ধি হয়েছে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে। ২০০১-০২ অর্থবছরে পোশাক রফতানি আগের অর্থবছরের তুলনায় কম হয়েছিল ৬ শতাংশের মতো। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পোশাকের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১৪ শতাংশ। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ।
অন্যদিকে পোশাক শিল্পের কর্পোরেট কর হার কমিয়ে আনতে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে। একই দিনে অর্থমন্ত্রী এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। এটিও আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে আগামী সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে।
জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পোশাক শিল্পের কর্পোরেট কর ২০ শতাংশ ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী সেটিকে কমিয়ে সাধারণ কারখানার জন্য ১৫ শতাংশ এবং সবুজ কারখানাকে উৎসাহিত করতে ১৪ শতাংশ কর্পোরেট কর নির্ধারণের প্রস্তাব দেন। এরপর ২৮ জুন সমাপনী বাজেট বক্তৃতায় পোশাক শিল্পে কর আরও কমানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে আয়কর হার ১০ শতাংশ এবং অন্য কারখানার ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি। এনবিআর এখন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নতুন কর হার কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছে।