এককভাবে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি কমেছে ৪২ কোটি মার্কিন ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশটিতে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৬২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি ছিল ছয় শতাংশের বেশি। আর গত অর্থবছর দেশটিতে রপ্তানি না বেড়ে উল্টো কমেছে প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৫২০ কোটি ডলারের।
সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ অথচ এর আগের অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি বেড়েছিল ১০ শতাংশের উপরে। একই সময়ে পোশাক রপ্তানি কমে গেছে কানাডাসহ বেশ কয়েকটি নতুন বাজারে। তবে ইউরোপের ২৭টি বাজারে সম্মিলিতভাবে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ৩ শতাংশ।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, ইউরোপে পোশাকের চাহিদা কিছুটা কমলেও যুক্তরাষ্ট্রে তা ছিল না। অথচ আমাদের রপ্তানি কমেছে। এ জন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর চাইতে নিজেদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাওয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন তারা।
বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসানের প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারে পোশাকের চাহিদা কিছুটা উঠানামা করলেও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের আমদানি কমেনি। বরং বেড়েছে। অথচ আমাদের রপ্তানি কমে গেছে প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ। একই সময়ে দেশটিতে আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর রপ্তানি কমেনি। এর অর্থ হলো, আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে আসার কথা এতদিন ধরে বলে আসলেও সমালোচকরা বিশ্বাস করতে চান নি। এবার প্রমাণ হলো।
তিনি বলেন, সেখানে রপ্তানি টাকার অঙ্কে কমলেও পোশাকের সংখ্যা খুব একটা কমেনি। এর অর্থ হলো পোশাকের দর কম পাওয়া গেছে। অন্যদিকে দেশে টাকার বিপরীতে ডলার দুর্বল হওয়াও আমাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদরাও মনে করছেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ইত্তেফাককে বলেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থান খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে প্রতিযোগী দেশ বিশেষত, ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কার অবস্থা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের মত এত খারাপ নয়। উত্পাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও টাকার বিপরীতে ডলার দুর্বল হওয়া এর পেছনে অন্যতম কারণ।’
তবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, বিশ্বব্যাপী পোশাকের চাহিদার কমছে। যুক্তরাষ্ট্রও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে দেশটিতে বাংলাদেশের খারাপ করার কারণ, সেখানে ওভেন পোশাকের দর পড়ে গেছে বেশি হারে। এর সঙ্গে টাকার বিপরীতে ডলারের দর কমে যাওয়াও বায়ারদের জন্য কিছুটা চাপ তৈরি করেছিল।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৪২২ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের। আর গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৩৯০ কোটি ১৯ লাখ ডলার। দুই অর্থবছরে নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ১৩৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও ১৩০ কোটি ২০ লাখ ডলার।
গত অর্থবছরে দেশটিতে তৈরি সার্বিক রপ্তানির পরিমাণ ৫৮৪ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। পূর্বের অর্থবছরে তা ছিল ৬২২ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে গত অর্থবছর দেশটিতে মোট রপ্তানি কমেছে ৩৭ কোটি ডলার।
অবশ্য গত ২০১৬ সালের বিশ্বব্যাপী রপ্তানির তথ্য অনুযায়ী, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া বাদে প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের রপ্তানি বিশ্বব্যাপী কমেছে। ২০১৬ সালে ভারতের রপ্তানি কমেছে এক শতাংশ, চীনের ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার দেড় শতাংশ কমেছে। একই সময়ে ভিয়েতনামের বেড়েছে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ১২ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ১ দশমিক ১ শতাংশ।
ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমদানিকারকরা যে বাজার থেকে কিনলে তাদের পোষাবে বা লাভ হবে, সেখানেই যাবে। আমরা তাদেরকে কীভাবে এখানে আসার সুযোগ করে দিতে পারি, সে চেষ্টাই করতে হবে।’