Home Bangla Recent সময়ের কড়াকড়িতে সংকটে পোশাক খাত

সময়ের কড়াকড়িতে সংকটে পোশাক খাত

চট্টগ্রাম বন্দর

জাহাজজট কমাতে চট্টগ্রাম বন্দরের নেওয়া উদ্যোগ রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের জন্য নতুন সংকট তৈরি করেছে। জেটিতে নোঙর করার পর রপ্তানি পণ্য জাহাজে তোলার ক্ষেত্রে আগের মতো ছাড় দিচ্ছে না বন্দর। গত পাঁচ দিনে রপ্তানি পণ্যভর্তি ৮০৫টি কনটেইনার না নিয়ে বন্দর ছেড়ে গেছে ১৪টি জাহাজ। অবশ্য বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যেসব কনটেইনার বন্দরে ঢুকেছে, সেই সব কনটেইনার জাহাজে তোলা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার না নিয়ে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার এমন ধারাবাহিক ঘটনা অতীতে আর কখনো ঘটেনি। এ কারণে বিদেশি ক্রেতার কাছে নির্ধারিত সময়ে পণ্য পৌঁছানো যাবে না। এ ঘটনা পোশাক খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

গতকাল বুধবার বন্দর ছেড়ে যাওয়া ‘ওয়াইএম ইনভেনটিভ’ জাহাজটিতে ৭০৪ কনটেইনার (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা) রপ্তানি পণ্য বোঝাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাহাজে ৬৪০ কনটেইনার রপ্তানি পণ্য তোলা হয়। জাহাজটি ছাড়ার ছয় ঘণ্টা আগে বন্দরে ঢুকতে না পারায় ২৩ কনটেইনার ওই জাহাজে করে রপ্তানি হয়নি। বাকি ৪১ কনটেইনার পণ্যের রপ্তানি আগেই স্থগিত করা হয়। একইভাবে মঙ্গলবার ‘এমভি সি মাস্টার’ জাহাজে শেষ মুহূর্তে ২৪ কনটেইনার তোলা যায়নি। অথচ অন্য সময়ে জাহাজ ছাড়ার তিন ঘণ্টা আগেও পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার বন্দরে এলেই জাহাজে তোলার বিশেষ সুবিধা দেওয়া হতো।

ব্যবসায়ীরা বলেন, গত ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতিকে জানিয়ে দেয় জাহাজ জেটি ত্যাগ করার ছয় ঘণ্টা আগে রপ্তানি পণ্য বন্দরে নিয়ে আসতে হবে।

তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য কারখানা থেকে প্রথমে চট্টগ্রামের বেসরকারি ১৬টি ডিপোতে আনা হয়। এখানেই এসব পণ্য কনটেইনারে বোঝাই এবং শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। এরপর ডিপো থেকে প্রাইম মুভার ট্রেইলারে (কনটেইনারবাহী গাড়ি) করে কনেটইনারগুলো সরাসরি বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজে করে এসব কনটেইনার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা শ্রীলঙ্কার কোনো একটি বন্দরে নেওয়া হয়। সেখান থেকে কনটেইনারগুলো ইউরোপ ও আমেরিকাগামী বড় জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। কোনো রপ্তানিকারক তাঁর পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে নির্ধারিত জাহাজে তুলে দিতে না পারলে ওই তিনটি বন্দরে অপেক্ষমাণ নির্দিষ্ট জাহাজে ওই পণ্য তুলে দেওয়া যায় না। এর অর্থ, বিদেশি ক্রেতাও সময়মতো পোশাক পাবে না।

টানা আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে বন্দরে জাহাজজট চলছে। গতকালও কনটেইনারবাহী ১৫টি জাহাজ জেটিতে ভিড়তে বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষায় ছিল। জাহাজজট কমাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বন্দর জেটিতে ভেড়ানোর পর ক্রেনবিহীন জাহাজ ৪৮ ঘণ্টা, ক্রেনযুক্ত ছোট আকারের জাহাজ ৬০ ঘণ্টা এবং একটু বড় আকারের জাহাজ ৭২ ঘণ্টা জেটিতে অবস্থানের সুযোগ পাবে। এই সময়ের মধ্যে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নামিয়ে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বোঝাই করে জেটি ছাড়বে জাহাজ। আগে জাহাজ জেটিতে অবস্থানের ক্ষেত্রে এ রকম কড়াকড়ি ছিল না।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর পর্ষদের সদস্য জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণে ছাড় দেওয়া আছে। এই ছাড় দেওয়া সময়ের মধ্যেও কেউ যদি তাঁর পণ্য বন্দরে পৌঁছাতে না পারেন, এর জন্য বন্দর দায়ী হবে না। তিনি বলেন, বন্দরের ভেতরে আসার পর কোনো কনটেইনার জাহাজে তোলা হয়নি এমন ঘটনা ঘটেনি।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পোশাকশিল্পের আমদানি করা কাঁচামাল সময়মতো হাতে না পাওয়ায় উৎপাদনে দেরি হচ্ছে। এখন রপ্তানি কনটেইনার ফেলে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় নতুন করে সংকট শুরু হবে এই খাতে। আগে বন্দর কর্তৃপক্ষ সময়মতো রপ্তানিকারকদের হাতে কাঁচামাল তুলে দিক। বন্দরে রপ্তানি কনটেইনার রাখার জায়গা তৈরি করুক। এরপর নিয়মনীতি কঠোর করলে আমাদের আপত্তি থাকবে না।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এখন কনটেনারে করে যেসব পোশাক রপ্তানি হচ্ছে, সেগুলোর কাঁচামাল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গত জুন মাসে হাতে পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।কিন্তু জাহাজজটের কারণে কাঁচামাল হাতে পেতে তাঁদের বাড়তি এক সপ্তাহ সময় লেগেছে। এতে উৎপাদনে দেরি হয়েছে। এখন নির্ধারিত জাহাজে রপ্তানি পণ্য তুলে দেওয়া নিয়ে নতুন করে সংকটে পড়েছেন তাঁরা।

বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিক সমিতির সভাপতি নুরূল কাইয়ুম খান প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর চত্বরে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার রাখার জায়গা দিতে পারছে না। আবার রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণেও কোনো ছাড় দিচ্ছে না। জাহাজ ছাড়ার ছয় ঘণ্টা আগে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে নিতে না পারলে নির্দিষ্ট জাহাজে তোলা যাচ্ছে না। আগে তিন ঘণ্টা আগেও জাহাজে তোলা যেত। বন্দরের নতুন পদক্ষেপের কারণে গত কয়েক দিনে তৈরি পোশাকের পাঁচ শতাধিক কনটেইনার না নিয়ে জাহাজ বন্দর ছেড়ে গেছে।

গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। ডিপো থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার আনা-নেওয়ার অনেক সড়ক পানিতে ডুবে ছিল। এর মধ্যে বন্দরের নতুন পদক্ষেপের কারণে নির্ধারিত সময়ে বন্দর ফটক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি অনেক ট্রেইলার।

সমুদ্রগামী বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানির প্রতিনিধি ও বেসরকারি ডিপো মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শনিবার রপ্তানি পণ্যবোঝাই ৪৭৮টি কনটেইনার না নিয়ে জেটি ছেড়ে গেছে ছয়টি জাহাজ। এসব কনটেইনার জাহাজ ছাড়ার ছয় ঘণ্টা আগে বন্দরের ভেতরে ঢুকতে পারেনি। গত মঙ্গলবার একইভাবে তিনটি জাহাজ ২১০টি কনটেইনার ফেলে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানি পণ্যবোঝাই এসব কনটেইনার বন্দর ফটকের মধ্যে ঢুকতে পারেনি। ডিপো থেকে বের হওয়ার পর এসব কনটেইনার রাস্তায় বা বন্দর ফটকের বাইরে ছিল। আগের মতো ছাড় দেওয়া হলে এগুলো জাহাজে তুলে দেওয়া যেত বলে ডিপোর মালিকেরা জানান।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কোন জাহাজে কত রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার যাবে, তা আগেই ঠিক করা থাকে। নির্ধারিত জাহাজে কনটেইনার তুলে দিতে না পারলে নতুন করে একই প্রক্রিয়া আবার শুরু করতে হয়। আরেকটি জাহাজে এই কনটেইনার তুলে দিতে তিন দিন পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here