রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকসহ দেশের সম্ভাবনাময় দশ খাতের ৯০ শতাংশ শ্রমিকের প্রশিক্ষণ নেই। তাদের দক্ষতার অভাবে প্রত্যাশা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়ছে না। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগামীতে দেশে দক্ষ জনগোষ্ঠী গঠনে এ ধরনের প্রতিবেদন সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দক্ষতা উন্নয়নে চলতি বাজেটে পাঁচ লাখ দক্ষ কর্মকর্তা তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আগামীতে সেই সংখ্যা আরও বাড়বে।
প্রতিবেদনে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরে দশটি খাতে কত শ্রমিক প্রয়োজন, শ্রমিকের দক্ষতার ঘাটতি পূরণে করণীয় তুলে ধরা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, চাহিদা অনুযায়ী বিপুলসংখ্যক দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি আছে। তা পূরণে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষের এই অনুষ্ঠানে সিনিয়র অর্থ সচিব হেদায়তুল্লাহ আল মামুন, বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৩ সালের শ্রম জরিপের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এতে অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় দেশের দশটি খাত বেছে নেওয়া হয়। খাতগুলো কর্মসংস্থান ও জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। সেগুলো হলো_ কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, নির্মাণ, স্বাস্থ্য, পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়াজাত, হালকা প্রকৌশল, তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প।
কে এ এস মুরশিদ সমকালকে বলেন, সরকারের উচিত হবে প্রতিবেদনের পরামর্শ অনুযায়ী কর্মসূচি নেওয়া এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। এ বিষয়ে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ডক্টর নাজনীন আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের চাহিদা পূরণ ও দক্ষতা বাড়ানো সরকারের পক্ষে একা সম্ভব নয়। বেসরকারি উদ্যোগও নিতে হবে। তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের দিক থেকে পোশাক হচ্ছে সবচেয়ে বড় খাত। তাই শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে এ খাতে বেশি নজর দিতে হবে।
বিআইডিএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সবচেয়ে বেশি অদক্ষ শ্রমিক রয়েছে চামড়া খাতে। এ খাতের ৯৫ ভাগ শ্রমিকেরই প্রশিক্ষণ নেই। কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে ৯৩ ভাগ শ্রমিক প্রশিক্ষিত নয়। পোশাক খাতে মাত্র আট ভাগ কর্মী প্রশিক্ষিত। বর্তমানে ৪০ লাখ কর্মী পোশাক শিল্পে সরাসরি নিয়োজিত রয়েছে, এর ৯০ ভাগই নারী। এ খাতে দক্ষ শ্রমিক নেই- দীর্ঘ সময় ধরে এমন অভিযোগ করে আসছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা। দাতারাও
দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে আসছেন। জানা যায়, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে যে কর্মসূচি চালু আছে, তাও যথেষ্ট নয়। বাজেটে এ বিষয়ে আরও বেশি বরাদ্দের দাবি রয়েছে।
পর্যটন খাতে ৭৫ ভাগ জনবলের প্রশিক্ষণ নেই। এ খাতে ইংরেজি বলতে না পারা বড় দুর্বলতা। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৬০ ভাগের প্রশিক্ষণ নেই। এ ছাড়া নির্মাণ, হালকা প্রকৌশল ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব যথাক্রমে ৯২, ৮৭ ও ৮৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের শ্রমবাজারে মোট জনবল লাগবে ৮ কোটি ২৯ লাখ। ২০২০ সালের মধ্যে প্রশিক্ষণ দিতে হবে ৫৪ লাখ এবং ২০২৫ সালে ৭২ লাখ।