দেশের প্রধান রপ্তানিখাত তৈরি পোশাকশিল্পে নতুন অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। ইউরোপীয় ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড পোশাক শিল্পের কর্ম-পরিবেশ উন্নয়নে দ্বিতীয় মেয়াদে আরও তিন বছর থাকাতে ব্র্যান্ড ও ক্রেতা-প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নতুন চুক্তি করায় এই অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার ও মালিকপক্ষ। বর্তমান চুক্তিতে আগামী বছর মে মাসে অ্যাকর্ডের চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নতুন এক তরফা চুক্তির কারণে আগামী ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাবে অ্যাকর্ড। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল বিকালে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে তিন প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূতের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করে জানিয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্য ও আইন মন্ত্রণালয়ের সভা হয়। এই সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়— ঢাকায় নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট, কানাডার রাষ্ট্রদূত বিনো পিয়েরে লারামি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুনকে। তাদের সঙ্গে এক তরফা অ্যাকর্ডের এই চুক্তি সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা হয়। এভাবে অ্যাকর্ড চুক্তি করতে পারে কিনা, তাও জানতে চাওয়া হয়। ওই সভায় বলা হয়, বাংলাদেশে সরকার আছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আছে। এই ধরনের চুক্তি সবাই মিলে করতে হবে। কিন্তু যেভাবে করা হয়েছে, তা ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতরাও একমত পোষণ করেন বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন—এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের কিছু জানানো হয়নি। শুনেছি সরকারও কিছু জানে না। আমরা মনে করি— অংশীজন ছাড়া এমন চুক্তি অ্যাকর্ড করতে পারে না।
এর আগে গত ২৯ জুন নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরে অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বা অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা-প্রতিষ্ঠান এবং বৈশ্বিক ট্রেড ইউনিয়ন একমত হয় যে— তারা বাংলাদেশে আগামী ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত কার্যক্রম চালাবে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে অ্যাকর্ড জানিয়েছে, আগামী বছরের ২০১৮ সালের মে মাসে তাদের চুক্তি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সংস্কারকাজে ধীর গতিসহ নানা কারণে গত কিছুদিন ধরেই সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে দেশে-বিদেশে জোর আলোচনা হয়। তারই আলোকে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাবে ইতিমধ্যে ইন্ডাস্ট্রিঅল, ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়নসহ কয়েকটি কোম্পানি স্বাক্ষর করেছে। সামনের দিনগুলোতে বাকি অনেক কোম্পানি স্বাক্ষর করবে। বর্তমানে পোশাক খাতের প্রায় ২০০ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা-প্রতিষ্ঠান অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছে।