বাংলাদেশের কারাখানাগুলোর শ্রম পরিবেশ উন্নত করতে তৈরি পোশাকের ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট ‘অ্যাকোর্ড’ নতুন চুক্তিতে একমত হয়েছে। ২০১৮ সালের চুক্তির মেয়াদ পেরিয়ে যাবে বলে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিদর্শন চালাতে প্যারিসে নতুন করে সমঝোতা করল ইউরোপের ক্রেতারা। এতে প্রথমবারের মতো শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার বিষয়টি রেখে রাখা হয়েছে।
ইন্ডাস্ট্রিঅল ও ইউএনআইর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্যারিসে সিঅ্যান্ডএ আর এলসি ওয়াইকিকির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে নতুন এই চুক্তির ঘোষণা দেয় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক শ্রমিক অধিকার সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়ন ও ইউএনআই গ্লোবাল ইউনিয়ন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চুক্তিতে সই করা ক্রেতা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে কেমার্ট অস্ট্রেলিয়া, টার্গেট অস্ট্রেলিয়া, প্রাইমার্ক, এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেঙ্, সিঅ্যান্ডএ, ওটো, কিক, আলদি সাউথ, আলদি নর্থ, লিডল, টিসিবো, এলসি ওয়াইকিকি ও হেলি হানসেন। এছাড়া ইসপিরিট, হিউরেন, বেস্টসেলার, উইবরা, স্কিমড গ্রুপ, এন ব্রাউন গ্রুপ, পিভিএইচ, স্পেশালিটি ফ্যাশন গ্রুপ অস্ট্রেলিয়াও নতুন চুক্তিতে সই করবে বলে ইন্ডাস্ট্রিঅল ও ইউএনআইর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালের চুক্তির মেয়াদ পেরিয়ে যাবে বলে দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিদর্শন চালাতে প্যারিসে নতুন করে সমঝোতা করল ইউরোপের ক্রেতারা। এতে নিরাপত্তার কারণে কোন কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে অথবা স্থানান্তরের সময় শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি যুক্ত করে নতুন চুক্তিতে তাদের সুরক্ষার বিষয়টিকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। শ্রমিকদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রথমবারের মতো এতে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করা এবং এতে যোগ দেয়ার বিষয়ও রাখা হয়েছে।
চুক্তিতে সই করা ক্রেতারা যেসব কারখানা থেকে পোশাক নিয়ে থাকে সেসব কারখানা আরও তিন বছর পরিদর্শনের সুযোগও রাখা হয়েছে। চলমান অ্যাকর্ডের চুক্তির আওতায় এক হাজার ৮০০ এর বেশি কারখানার অগি্ন, বৈদ্যুতিক এবং ভবনের নিরাপত্তা পরিদর্শন করা হয়েছে।
এদিকে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের এই পরিদর্শনের বিরোধিতা করে আসছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতের অনেক মালিক। ২০১৮ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে তাদের সঙ্গে আর নতুন চুক্তি না করার কথা বলে আসছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও। তিনি গত বছর বলেছিলেন, আমরা মনে করি না ২০১৮ সালের পর আর অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আমাদের এখানে থাকার প্রয়োজন আছে। এই পরিদর্শন চালানোর মতো সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে বলে প্রতিমন্ত্রীর দাবি।
উল্লেখ্য, সাভারের রানা প্লাজা ধসে হাজারের বেশি শ্রমিক নিহত হওয়ার পর ২০১৩ সালের মে মাসে ইউরোপীয় ক্রেতারা বাংলাদেশের কারখানাগুলোর শ্রম পরিবেশ উন্নতে সহযোগিতা করতে ‘অ্যাকোর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ’ চুক্তি করে। একইভাবে আমেরিকার ক্রেতাদের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত হয় ‘বাংলাদেশ সেফটি অ্যালায়েন্স’ চুক্তি। ইউরোপীয় চুক্তিটি এবং ক্রেতাদের জোটটি ‘অ্যাকোর্ড’ নামে পরিচিতি পায়, যুক্তরাষ্ট্রেরটি পরিচিত পায় অ্যালায়েন্স নামে। দুই অঞ্চলের ক্রেতাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়, যার আওতায় তারা ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করে ছাড়পত্র দিচ্ছে।