গার্মেন্ট মালিকরা তৈরি পোশাক খাতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিরোধিতা করে এলেও অবশেষে তারা এই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। এখন তারা তাদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য হওয়া সাপেক্ষে পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ দিতে রাজি হয়েছেন। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ইপিজেডের বাইরে পোশাক কারখানা স্থাপন করতে পারবেন। তারা সেই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানিও করতে পারবেন।
গত সপ্তাহে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।সূত্রগুলো জানায়, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের পোশাক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে এ ব্যাপারে দেশের পোশাক ব্যবসায়ীরা শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল, পোশাকশিল্পকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে এসেছেন দেশীয় উদ্যোক্তারাই এবং তারাই এ খাতে বিনিয়োগের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিজিএমইএ আরও মনে করে, ইপিজেড এলাকার বাইরে পোশাক খাতে বিশেষ করে কাটিং ও মেকিংয়ের কাজে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হলে পোশাক খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকের পর সর্বশেষ গত ১১ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আরেকটি বৈঠক হয়, যেখানে জাপান অ্যাম্বাসি, জেট্রোর প্রতিনিধি ছাড়াও বিজিএমইএর প্রতিনিধি অংশ নেন। বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপস্থিত বিজিএমইএর প্রতিনিধিরা তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসে পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ দিতে সম্মত হন। বিজিএমইএ এখন চাইছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের সংগঠনের সদস্য হওয়া সাপেক্ষে এই দেশের পোশাকশিল্পে বিনিয়োগ করতে পারবেন। ওই সভায় বিজিএমইএর প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন সংগঠনের সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান খান। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, আইনগতভাবে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আটকে রাখতে পারি না। এ ছাড়া জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো আমাদের দেশ থেকে প্রচুর পোশাক আমদানি করে থাকে। তাই তারা যদি বিনিয়োগ করতে চায় আমাদের আপত্তি নেই। তবে এক্ষেত্রে ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) সুবিধা নেওয়ার জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিজিএমইএর সদস্য হতে হবে। পোশাক খাতে ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) হচ্ছে এমন একটি সুবিধা যা কেবল বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য হলে পাওয়া যায়। ইউডি সার্টিফিকেট নিয়ে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় পোশাকশিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যেহেতু বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য নয়, সে কারণে তারা ইউডি সার্টিফিকেট নিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করতে পারে না। এখন থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সদস্য হওয়া সাপেক্ষে ওই সুবিধা লাভ করবে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর সদস্য হতে রাজি হবে না, তাদের কীভাবে সুবিধা দেওয়া হবে? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়টি নিয়ে তারা তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের অবস্থান হচ্ছে, বিদেশি প্রতিষ্ঠান যারা বিজিএমইএর সদস্য হবে না তাদের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ইউডি সুবিধা দেবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা দেওয়ার অনুমোদন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।