ঈদে নিরাপদে বাড়ি যেতে এবারও তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ধাপে ধাপে ছুটি দিতে কারখানা মালিকদের পরামর্শ দিয়েছিল বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সে অনুসারে আগামীকাল সোমবার থেকে এ ছুটির প্রক্রিয়া শুরু করবেন কারখানা মালিকরা। এ প্রক্রিয়া চলবে ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
এ ছাড়া পরামর্শ অনুযায়ী ছুটির আগেই অতিরিক্ত কাজ করিয়ে পরে বেশি ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছেন কারখানা মালিকরা। সে হিসাবে পোশাক খাতের শ্রমিকরা এবার তিন দিনের সরকারি ছুটির সঙ্গে বাড়তি পাঁচ দিন ছুটি পাচ্ছে।
এদিকে শ্রমিকদের ঈদ বোনাস এবং কারখানার সক্ষমতার ভিত্তিতে শ্রমিকদের চলতি মাসের আগাম বেতনও দিতে বলা হয়েছিল। গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কারখানায় বোনাস দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ। তবে শ্রমিক নেতাদের দাবি, এটি ৬০ শতাংশের বেশি নয়। তাও শ্রম আইনের দুর্বলতার সুযোগে কোনো কোনো মালিক মূল বেতনের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বোনাস হিসেবে দিয়েছেন। আর কোনো কারখানা গতকাল পর্যন্ত চলতি মাসের অগ্রিম বেতন দেয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি কালের কণ্ঠকে বলেন, পথে যাতায়াতের চাপ সামলাতে সরকারের অনুরোধে বিজিএমইএ ২৮ আগস্ট সোমবার থেকে কারখানার মালিকদের ঈদের ছুটি শুরু করার আহ্বান জানায়।
তিনি বলেন, পোশাক খাতে এবারের ঈদের ছুটি থাকবে মোট আট দিন। শ্রমিকদের ঈদ বোনাস এবং চলতি মাসের অগ্রিম বেতন নিয়ে জানতে চাইলে এস এম মান্নান কচি জানান, ‘এ পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কারখানার মালিক তাঁদের শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দিয়ে দিয়েছেন। কিছু কারখানার সমস্যা রয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা মালিক-শ্রমিক এবং ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করছি কোনো রকম সংকট ছাড়াই শ্রমিকরা নিরাপদে বাড়িতে গিয়ে ঈদ করতে পারবে। ’
চলতি মাসের বেতন নিয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর এই সহসভাপতি জানান, নিয়ম অনুসারে চলতি মাসের বেতন শ্রমিকরা পাবে আগামী মাসের প্রথম ১০ দিনের মধ্যে। তবে কারখানার মালিকরা সাধারণত ঈদ উৎসবের আগে তাঁদের সক্ষমতার ভিত্তিতে বোনাসের সঙ্গে চলতি মাসের বেতনও পরিশোধ করে থাকেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে তাঁর বিশ্বাস। তবে ছোট ও মাঝারি এবং যাদের কাজ কম এমন কারখানাগুলো তাদের সক্ষমতা অনুসারে মোট বেতনের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পরিশোধ করবেন বলে তিনি আশা করছেন।
তবে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্রম আইনে বোনাস একটি মূল বেতনের ঊর্ধ্বে নয়, এমন বলা আছে। কিন্তু নিচে কত হবে এর ব্যাখ্যা না থাকায় কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের ঠকাচ্ছেন।
শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি কালের কণ্ঠকে বলেন, শ্রম আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক মালিক মূল বেতনের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ হারে বোনাস দিয়েছেন। তাও ৬০ শতাংশের বেশি কারখানা মালিক গতকাল পর্যন্ত বোনাস দেননি। আবার ভালো কারখানাগুলো মূল বেতনের সমপরিমাণ বোনাস দেয়।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবারের বেতন-বোনাস নিয়ে শতাধিক কারখানায় সংকট তৈরি হতে পারে। এসব কারখানা কোনো কোনো মালিক বন্ধ করে দিচ্ছেন। কেউ শ্রমিকদের বেতন-বোনাস না দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার কেউ বেতন-বোনাসের দাবি জানালে মালিকরা শ্রমিকদের ছাঁটাই করছেন।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, ঈদের আগে সড়ক-রেল-নৌপথে যানবাহনের চাপ সমালাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বিজিএমইএকে ঈদের আগে ধাপে ধাপে কারখানাগুলো ছুটি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও সরকারের নির্দেশনা অনুসারে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে মালিকদের এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়।