অবকাঠামো খাতে প্রত্যাশিত উন্নতি না হলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ পোশাক শিল্প প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে বলে মনে করে এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নানা ধরনের জটিলতায় সময়মতো পোশাকের চালান পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে ক্রেতারা রফতানি আদেশ অন্য দেশে নিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে অব্যবস্থাপনার কারণে বছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলার মূল্যের রফতানি আদেশ হারাতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত মালামাল খালাস ও রফতানি পণ্য জাহাজীকরণে জটিলতা এবং পোশাক শিল্প খাতের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে সোমবার সংগঠনের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপিত সিদ্দিকুর রহমান। এ সময় সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পোশাক খাতে রফতানি আয় ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম এসেছে। মন্থর প্রবৃদ্ধির ধারা থেকে শিল্প এখনও বেরিয়ে আসতে পারেনি। জুন মাসে পোশাক রফতানি ১৬ দশমিক ১৩ শতাংশ কমেছে। টানা পাঁচ মাস ধরে ওভেন পোশাক রফতানি কমছে। এক বছরে পোশাক রফতানিতে আয় বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। ১৫ বছরে এবার সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি দেখেছে দেশের পোশাক শিল্প। অথচ এ খাতে ১০ বছর ধরে গড়ে ১৩ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে পোশাক রফতানিতে।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়েই পোশাক শিল্প প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে পোশাক শিল্প। বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীরব মন্দা, ইউরোর দরপতন, ব্রেক্সিট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের কারণে চাপে রয়েছে দেশের পোশাক শিল্প। এ পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে পণ্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধির কারণে ২ বছরে পোশাক উৎপাদনে ব্যয় ১৮ শতাংশ বেড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এ দেশের পোশাক শিল্পকে নিয়ে দেশে ও বিদেশে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নেতিবাচক প্রচারণার কারণে এ শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। একই কারণে পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পোশাক খাতের ৪৪ লাখ শ্রমিকের স্বার্থে অপপ্রচার থেকে বিরত থাকতে তিনি আহ্বান জানান।
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, জটিলতার কারণে পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না। এ কারণে রফতানি আদেশ অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে হঠিয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসার ঘোষণা দিয়েছে ভারতের সরকার। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, বন্দরে অব্যবস্থাপনার কারণে বছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলার মূল্যমানের রফতানি আদেশ অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। ১৫০ থেকে ২০০ এলসিএল কন্টেইনার বেশি থাকে এমন জাহাজ খালাস দিতে ১৫ থেকে ২০ দিন লাগছে। আমদানি করা কাঁচামাল পেতে বিলম্ব হওয়ায় উৎপাদনে যেতেও দেরি হয়। অথচ বাজার ধরে রাখতে হলে ক্রেতাদের কাছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য পাঠাতে হবে। আবার আমদানি ও রফতানি পণ্যের কনটেইনার লোডিং-আনলোডিংয়ে ধীরগতির ফলে অনেক সময় মাদার ভ্যাসেল ধরা যাচ্ছে না। জাহাজজট কমানোর নামে নেয়া পদক্ষেপের ফলে নির্ধারিত জাহাজে রফতানি পণ্য তুলে দেয়া নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পোশাক শিল্পের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের ৮০ শতাংশই সম্পাদিত হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে। এ অতি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ব্যবহার আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা না হলে বিশেষ করে অধিক সংখ্যক ইয়ার্ড এবং জেটি নির্মাণ করা না হলে সমস্যার সমাধান হবে না। বন্দরে স্বাধীনতার আগে মাত্র ১৩টি জেটি ছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪৬ বছরে মাত্র সাতটি জেটি সংযোজিত হয়েছে বলে তিনি জানান।