কারখানা সংস্কারে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা বা জাইকা তহবিল থেকে ঋণ নিতে আবেদন করে চট্টগ্রামের বেস টেক্সটাইল লিমিটেড। ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে গত ৮ মার্চ আবেদনটি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়। তবে আজ অবধি ওই আবেদনের কোনো অগ্রগতি হয়নি। শর্ত অনুযায়ী গণপূর্ত বিভাগের কারিগরি মূল্যায়ন না হওয়ায় ঋণ ছাড় করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
জাইকা তহবিলের অর্থ জমা হওয়ার পরও দীর্ঘদিন ধরে তা ছাড় করতে না পারায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কারিগরি মূল্যায়নের কাজ দ্রুত শুরুর বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঠানো চিঠিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে যথাশিগগির ঋণগ্রহীতা মূল্যায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের কারখানা সংস্কারে ৪২৪ কোটি জাপানি ইয়েন বা ২৭৪ কোটি টাকার একটি তহবিল দেয় জাইকা। জাইকা তহবিল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে সহজ শর্তে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার কথা হয়। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে তহবিলের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা হয়েছে। ঋণ বিতরণের জন্য ৩৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তবে কারিগরি মূল্যায়ন না হওয়ায় এক টাকাও ছাড় হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী জাইকা তহবিল থেকে ঋণ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন করবে। আবেদনে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্য, ঋণের ব্যবহার, কতজন শ্রমিক, কারখানার আয়তন এবং পরিকল্পিত সংস্কারের বিবরণসহ বিভিন্ন তথ্য থাকতে হয়। এসব তথ্যের সঠিকতা যাচাই করবে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তরের আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রকল্প ইউনিট। তাদের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে অর্থ ছাড় হবে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের আরবান বিল্ডিং সেফটি প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী সৈয়দ মাহফুজ আহমেদ সমকালকে বলেন, কিছু জটিলতার কারণে প্রকল্পের মূল্যায়ন শুরু করতে দেরি হয়েছে। বিশেষ করে জাইকার বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে জটিলতার কারণে এখনও মূল্যায়নের কাজ শুরু করা যায়নি। তবে পরামর্শক নিয়োগ হয়ে যাওয়ায় আগামী এক মাসের মধ্যে মূল্যায়নের কাজ শুরু হবে।
জানা গেছে, জাইকার বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের পর গত ৬ জুন গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সঙ্গে একটি বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংকে। বৈঠকে মূল্যায়নের কাজ দেরির কারণ হিসেবে বলা হয়, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠান যেসব কাগজপত্র দাখিল করেছে, সেখানে নানা অসঙ্গতি রয়েছে। এরপর গত ৭ জুন এসব প্রতিষ্ঠান যেসব ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন পাঠিয়েছে, তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানান, যেসব অসঙ্গতি ছিল তা ঠিক করার পরও মূল্যায়নের কাজ শুরু হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চাইল বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বেস টেক্সটাইল ছাড়া ৮টি আবেদন পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব আবেদনের সবই এসেছে গত মার্চ ও এপ্রিলে। আবেদনকারী অন্য প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে গাজীপুরের রিভেরা কম্পোজিট লিমিটেড, জেমটেক্স লিমিটেড, জায়াক্সটেক্স লিমিটেড ও ওয়ালথ ফ্যাশন লিমিটেড।
চট্টগ্রাম ভিত্তিক কেডিএস গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেডিএস এক্সেসরিজ এবং কেডিএস থ্রেড লিমিটেড এবং সাভারের ম্যাগপাই নিটওয়্যার লিমিটেড।