বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রফতানিতে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ‘চিলি’ ও ইউরোপের দেশ ‘আইসল্যান্ডে’র নাম। এক বছরের ব্যবধানে চিলিতে রফতানির প্রবৃদ্ধিও বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ, যা নতুন এ দেশে রফতানির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। লাতিন আমেরিকার এ দেশের পাশাপাশি নতুন দেশগুলোতে বাজার ধরারও চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ ব্রাজিলে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় এখানে প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ চট্টগ্রাম শাখার পরিচালক ছৈয়দ মো. তানভীর হোসেন সমকালকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে চিলিতে শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকারের সুযোগ থাকায় রফতানি বাড়ছে। এক বছরে এ হারও বেড়েছে উল্লেখ করার মতো। তাছাড়া এ মহাদেশের অন্য দেশগুলোতেও বাজার ধরার চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা। অধিক শুল্ক আরোপ করায় এসব দেশে প্রবেশ করতে পারছে না বাংলাদেশি পণ্য।’ বাংলাদেশ থেকে চিলি ওভেনের মধ্যে বোতাম, শার্ট, স্যুয়েটার এবং নিটের মধ্যে টি-শার্ট যাচ্ছে বলেও
জানান তিনি।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত চিলিতে ওভেন ও নিটওয়্যারে মোট রফতানি করা হয় ৩১ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি হয় ৪২ দশমিক ৪৯ মার্কিন ডলার। এক বছরে রফতানিতে মোট প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। শুধু ওভেন রফতানি হয় ১৩ দশমিক ৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি করা হয় ১৯ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে এক বছরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। আবার নিটওয়্যারে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি করা হয় ১৭ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং একই সময়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি করা হয় ২২ দশমিক ৮২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে এক বছরে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩০ দশমিক ৮২ শতাংশ।
এদিকে চিলিতে রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কমেছে একই মহাদেশের আরেক দেশ ব্রাজিলে। ওভেন ও নিটওয়্যারে এক বছরে প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে ওভেন
ম্যানুফেকচারিং খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রফতানি হয় ৪৮ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এক সময়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছের রফতানি হয় ৩২ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমে প্রায় ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে নিটওয়্যারেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি হয় ৫৪ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি হয় ৪২ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ খাতেও এক বছরে প্রবৃদ্ধি কমে প্রায় ২২ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন খান সমকালকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে লাতিন আমেরিকার চিলি এবং ইউরোপের আইসল্যান্ডে সিরামিক ও তৈরি পোশাক রফতানি করা হচ্ছে। তবে চিলির তুলনায় আইসল্যান্ডে এ রফতানির হার খুবই কম।’
জানা যায়, লাতিন আমেরিকার ২২ দেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করছে সরকার। রফতানি বাণিজ্যে আকাশচুম্বী সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, চিলি, মেক্সিকো, কলম্বিয়া, পানামা ও পেরুতে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক পণ্য রফতানিতে ব্রাজিলকে সর্ববৃহৎ সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি চিলিতেও বাড়ছে রফতানি প্রবৃদ্ধি। বিদ্যমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাধা দূর হলে ও শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেলে লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্কের সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। এসব দেশে সিরামিক ও তৈরি পোশাক এবং ওষুধ শিল্পের রফতানির সম্ভাবনা দেখছেন তারা।