২০১২ সালের ভয়াবহ রানা প্লাজা ধসের পর বিশ্ববাজারে রপ্তানিকৃত বাংলাদেশি তৈরি পোশাক পণ্যের দাম বাড়েনি। বরং ওই সময়ের পর তৈরি পোশাক রপ্তানি বেশি হলেও দাম কম হওয়ায় আয়ও সেভাবে বাড়েনি।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সভা কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ‘বাংলাদেশ ইন রিজিওনাল ট্রেড এন্ড কানেকটিভিটি এ পলিটিকো-ইকনোমিক অ্যাসেসমেন্ট’ শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) ।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর আতাউর রহমান। সভায় সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ আ স ম রব, ডা. জাফরুল্লাহ, অর্থনীতিবিদ মামুনুর রশীদ, নাসির উদ্দিন, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ, সিজিএস নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
পশ্চিমা ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ক্রেতারা তৈরি পোশাকের কোনো দাম বাড়ায়নি। অথচ অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের পরামর্শে আমরা গ্রিন কারখানা, ফায়ার সেফটিসহ সব কিছু করলাম। কিন্তু তারা পোশাকের দাম বাড়ায়নি।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের কোথাও অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স নেই। আমি তাদের বলছি, আপনারা শুধু বাংলাদেশে কেন, ভিয়েতনাম, চীন যাচ্ছেন না কেন?
তোফায়েল আহমেদ বলেন, একমাত্র বাংলাদেশেরই প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐক্য নেই। জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থে অনেক দেশেই রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাণিজ্যে সক্ষমতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। বিগত সাড়ে ৮ বছরে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বিস্ময়কর উত্থান হয়েছে। ২০২১ সালে সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ ডিজিটাল মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা দিয়ে বাংলাদেশ আমদানি ও রপ্তানি নীতি গ্রহণ করেছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ডব্লিউটিওর দেয়া বাণিজ্য সুবিধা গ্রহণের জন্য পেপার লেস বাণিজ্যে সক্ষমতা অর্জনের প্রস্তুতি চলছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) স্বাক্ষর করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, কোনো দেশ তার দেশি শিল্পের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেয় না। সব দেশই নিজের শিল্প-কারখানাকে এগিয়ে নিতে চায। এটা ঠিক ভারত দুটো পণ্য ছাড়া সব পণ্যে কোটা ফি, ডিউটি ফি সুবিধা দেয়। আমাদের পাট রপ্তানির ২০ শতাংশই ভারতে রপ্তানি হয়। তাই ভারত পাটজাত পণ্যে অ্যান্টি ড্যাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে, তবে কাঁচা পাটে নয়। কারণ কাঁচা পাট তাদের বেশি দরকার। আমরা অ্যান্টি ড্যাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য কথা বলেছি, আরো বলব।
তিনি বলেন, আমরাও দেশি শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করছি। ১৯৯৬ সালে আমি যখন শিল্পমন্ত্রী তখন ৯ লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদন হতো। এবার হবে ৩০ মিলিয়ন বা ৩ কোটি টন সিমেন্ট। এটা একদিনে হয়নি। ওই সময়ে ফিনিক্স সিমেন্টের ওপর ডিউটি বাড়িয়ে দিলাম, কংক্রিটের ওপর কমিয়ে দিলাম।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, এখন লাফার্জ দেখছে, এদের জমি ঠিক করে দেয়া, ৭ বছর ডিউটি ফি আমরা করে দিয়েছি। তারপরে স্ক্যান সিমেন্ট, শাহ সিমেন্ট, মেঘনাসহ অনেক বড় কোম্পানি হয়েছে। সবগুলোকে আমরা সব ধরনের সহায়তা দিয়েছি।