Home Bangla Recent বন্ধের হুমকিতে ১ হাজার পোশাক কারখানা

বন্ধের হুমকিতে ১ হাজার পোশাক কারখানা

পোশাক শিল্প মূল্যায়নে উত্তর আমেরিকাভিত্তিক ক্রেতাজোট অ্যালায়েন্স ও ইউরোপভিত্তিক অ্যাকর্ডের পাশাপাশি চালু রয়েছে সরকারের জাতীয় উদ্যোগও। এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কারখানা। মূল্যায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে এরই মধ্যে এসব কারখানার ত্রুটি শনাক্ত হয়েছে, সংশোধনে বেঁধে দেয়া হয়েছে সময়। সরকারের প্রতিনিধিরা বলছেন, সংশোধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারলে এ কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ অবস্থায় বন্ধের হুমকিতে রয়েছে প্রায় এক হাজার পোশাক কারখানা।

দেশের মোট ১ হাজার ৫৪৯ কারখানা জাতীয় উদ্যোগে মূল্যায়নের আওতায় রয়েছে। প্রাথমিক পরিদর্শনের পর ঝুঁকির মাত্রাভেদে কারখানাগুলোকে গ্রিন, ইয়েলো, অ্যাম্বার ও রেড শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। ‘ইমপ্রুভিং ওয়ার্কিং কন্ডিশন ইন দ্য রেডি মেড গার্মেন্ট সেক্টর’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কারিগরি সহায়তায় আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর অর্থায়নে এ মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় এখন ত্রুটিপূর্ণ কারখানাগুলো সংস্কারের বিষয়ে তাগাদা দিতে শুরু করেছে সরকার।

সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় উদ্যোগের আওতায় থাকা ১ হাজার ৫৪৯ কারখানার মধ্যে ২৩১টি বন্ধ হয়ে গেছে। ৭৪টি কারখানা স্থানান্তর হয়েছে আর ২৭টি মূল্যায়নে সাড়া দেয়নি। এছাড়া অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের মূল্যায়নের আওতায় আছে ২৫টি কারখানা। প্রায় ১ হাজার ২০০ কারখানায় স্থাপত্য, বৈদ্যুতিক ও অগ্নি ত্রুটি শনাক্ত হয়েছে জাতীয় উদ্যোগে মূল্যায়ন কার্যক্রমের আওতায়। শনাক্ত হওয়া ত্রুটির ২১ শতাংশ সংশোধন হয়েছে। ৪১৮টি কারখানা গড়ে উঠেছে নিজস্ব ভবনে। ত্রুটি শনাক্ত হলেও সংশোধন কার্যক্রম সম্পন্ন করেনি, এমন কারখানা বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন সরকার প্রতিনিধিরা।

যোগাযোগ করা হলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সামছুজ্জামান ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে সংশোধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারলে আইন আমাদের যে ক্ষমতাটুকু দিয়েছে, সেটা আমরা প্রয়োগ করব। যেসব কারখানা রফতানিমুখী, তাদের ইউডি সেবা বন্ধ করা হবে। নিবন্ধন বাতিল করা হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এগুলো আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।

জানা গেছে, জাতীয় উদ্যোগের আওতায় থাকা কারখানাগুলোকে একাধিক নোটিস দেয়া হয়েছে। সংশোধন কার্যক্রমে তাগাদা দিতে এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কারখানা মালিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় কারখানাগুলো নিয়ে সরকারের পরিকল্পনাও মালিকদের অবহিত করা হচ্ছে। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এর পর ক্যাটাগরি ভাগ করে একেকটি কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার।

জাতীয় উদ্যোগের আওতায় প্রাথমিক পরিদর্শনের পর গ্রিন শ্রেণীভুক্ত কারখানাগুলোকে নিরাপদ বলে গণ্য করা হয়েছে। ইয়েলো শ্রেণীর কারখানাগুলোকে নিরাপদ বলা হলেও চার ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে। অ্যাম্বার শ্রেণীভুক্ত কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে। আর রেড শ্রেণীর কারখানাগুলোকে বিবেচনা করা হচ্ছে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে।

মূল্যায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে মোট ৩১৯টি কারখানাকে অ্যাম্বার শ্রেণীভুক্ত করা হয়। এসব কারখানাকে ডিইএ ও সিএপি বাস্তবায়নসাপেক্ষে উত্পাদন সচল রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিইএ ও সিএপি বাস্তবায়নের নির্দেশনা পরিপালনে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ। এমনকি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের মাধ্যমে কারখানাগুলোর কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি। এ অবস্থায় কারখানাগুলোকে বন্ধের নির্দেশনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি সংস্থা।

এর আগে কারখানা মালিকদের চিঠি পাঠিয়ে তাগাদা দিয়েছিল ডিআইএফই। চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার কারখানা ভবনের প্রিলিমিনারি অ্যাসেসমেন্ট ও কারেক্টিভ অ্যাকশন প্ল্যান (সিএপি) এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আপনি সিএপি বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এছাড়া স্ট্রাকচারাল, ফায়ার ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসেসমেন্টের আলোকে কাজের কোনো অগ্রগতিও নেই। এ অবস্থায় সিএপির আলোকে সংশোধন কার্যক্রম শুরু করে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ-বিষয়ক অগ্রগতি এ দপ্তরকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় শ্রম আইন অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জানা গেছে, ডিইএর আওতায় কারখানা ভবনগুলোর ‘অ্যাজ বিল্ট’ নকশা নিরূপণ করতে হচ্ছে। পরীক্ষা করতে হচ্ছে ভবনের তলদেশের মাটিও। আবার কংক্রিট পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি যাচাই করা হচ্ছে ভবনের কলামের সামর্থ্য। এছাড়া কোন কলামগুলোর ভিত আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করতে কারখানার নমুনাও তৈরি করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জাতীয় উদ্যোগের আওতায় থাকা কারখানা রূপা সোয়েটার্স (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রিলিমিনারি অ্যাসেসমেন্টের পর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ডিইএ করিয়েছি। এর পর সিএপি যাচাই-বাছাই করে আমরা দেখেছি, কারখানা সংস্কারে যে ব্যয় হবে, তাতে বিদ্যমান স্থানে ব্যবসা ফিজিবল হয় না। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে আমরা কারখানাটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছি।

একইভাবে ডিইএ ও সিএপি না করার পেছনে কারখানা স্থানান্তরকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এমএস নিটের কর্ণধার খাজা রহমাতুল্লাহ। তিনি বলেন, আমাদের কারখানায় উত্পাদন কার্যক্রম চলছে। তবে নারায়ণগঞ্জের কাশিপুরে নতুন স্থানে কারখানাটি স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন স্থানে বর্তমানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সেখানে কারখানা স্থানান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here