দেশে আমেরিকার ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যালায়েন্স আগামী বছর তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর পরিদর্শনের মেয়াদ আর বাড়াতে চায় না। তারা চায়, পরিদর্শনের চলমান ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকুক। এ জন্য একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী পরিদর্শন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে কার্যক্রম হস্তান্তর করতে চায়। ঢাকায় অ্যালায়েন্সের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে। ইউরোপের ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যাকর্ড আগামী বছর শেষে আরো তিন বছর তাদের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে সরকার ও কারখানা মালিকদের কড়া প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই সবার দৃষ্টি অ্যালায়েন্সের সিদ্ধান্তে।
বাংলাদেশে অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকায় দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত জিম মরিয়ার্টি। তিনিও বিভিন্ন সময়ে তার বক্তব্যে ২০১৮ সালে অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে অ্যালায়েন্সের মনোভাব জানার চেষ্টা করেছে বিজিএমইএ। আগামী বছর মেয়াদ শেষে অ্যালায়েন্সের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই বলে তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন। বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, অ্যালায়েন্স নির্দিষ্ট সময়ের পর তাদের কার্যক্রম আর দীর্ঘায়িত করবে না বলে জেনেছি। আমরা আশা করছি, তাদের সময়সীমার মধ্যেই কারখানাগুলো তাদের শতভাগ সংস্কার সম্পন্ন করতে পারবে।
২০১৩ সালে কার্যক্রম শুরু করার পর অ্যালায়েন্সভুক্ত ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রায় ছয়শ’ কারখানা পরিদর্শন শেষে এখন সংস্কার কাজ দেখভাল করছে এ জোট। এর মধ্যে রয়েছে ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অ্যালায়েন্সের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১১৮টি কারখানা সব ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটি সংস্কার করতে পেরেছে। অর্থাত্ এসব কারখানা এখন থেকে ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার বিষয়ে তুলনামূলক নিরাপদ। গতকাল অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এছাড়া ‘সময়মত সংস্কার করতে ব্যর্থ হওয়া কিংবা সহযোগিতা না করার’ অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৫৭টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসা বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এসব কারখানা অ্যালায়েন্সভুক্ত প্রায় ৩০টি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কোন ধরনের ব্যবসা করতে পারবে না।
২০১৩ সালের এপ্রিলে ভয়াবহ রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভালের লক্ষ্যে কাছাকাছি সময়ে গঠিত হয় অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালানোর কথা। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় এক বছর আগে সমপ্রতি অ্যাকর্ড বাংলাদেশ সরকার বা পোশাক শিল্প মালিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই আগামী বছরের পর আরো তিন বছর তাদের কার্যক্রম বাড়ানোর বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সময়ে কারখানায় শ্রমিকের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া কার্যক্রমটি ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডের আইনে চলবে বলেও জানা গেছে। এ নিয়ে সরকার ও পোশাক মালিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে এ বিষয়ে সরকারের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছেন। গত রবিবার বিজিএমইএ ইস্যুটি নিয়ে জরুরি সভায় বসেন পোশাক শিল্প মালিকরা। সভায় অ্যাকর্ডের একতরফা মেয়াদ বাড়ানো, কার্যক্রমের আওতায় ট্রেড ইউনিয়নকে যুক্ত করা এবং নেদারল্যান্ডের আইন অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভের কথা জানান। আগামী বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অ্যাকর্ড যাতে কোনভাবেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে না পারে, সে বিষয়ে সরকার ও বিজিএমইএকে একযোগে কাজ করার দাবি জানান তারা। অ্যাকর্ড ইতিমধ্যে প্রায় দেড় হাজার কারখানা পরিদর্শন শেষে সংস্কার কাজ তদারক করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সংস্কার ও তদারক কার্যক্রম কীভাবে চলবে তা নিয়ে উভয় জোটের সংশয় রয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম দেখভালের জন্য স্বাধীন ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান দেখতে চায় তারা। এ বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকারকে মনযোগ দিতে হবে।