বর্তমানে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কী পরিমাণ বিদেশি কাজ করছেন তার সঠিক হিসাব নেই বিজিএমইএর কাছে। কারো মতে এই সংখ্যা ২০ হাজার আবার কারো হিসাবে ২ হাজারের বেশি হবে না। তবে সংখ্যা যাই হোক এই বিশেষজ্ঞদের সবাই উচ্চ বেতনে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করছেন, বেতন নিচ্ছেন ইউএস ডলারে। এভাবে প্রতিবছর লাখ লাখ ডলার ব্যয় হয় এই বিদেশিদের পেছনে।
যদিও দেশের পোশাকশিল্পের আজকের অবস্থানে আসার পেছনে তাদের অবদান রয়েছে। তবে দেরিতে হলেও এই খাতে বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে বাংলাদেশি ছেলে-মেয়েদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বিজিএমইএ। ঢাকায় বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামে অনার্স কোর্স চালুর পর এবার শ্রীলঙ্কা ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (স্লিটা) সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ৫ বছরের চুক্তি করেছে বিজিএমইএ, চট্টগ্রাম থেকে পরিচালিত চিটাগং বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিবিআইএফটি)। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা এই কারিগরি প্রতিষ্ঠানের কারিকুলাম ও বিশেষজ্ঞ সহযোগিতা নিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং ও টেক্সটাইল খাতে এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স চালু করবে তারা। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় এই দুই সংস্থার মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়।
চুক্তির নেপথ্যে ভূমিকা রাখা বিজিএমইএ পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্যই হলো তৈরি পোশাক খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। কারণ বিদেশি এক্সপার্টদের পেছনে প্রতিবছর হাজার কোটি কষ্টার্জিত টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
আমাদের লক্ষ্য দেশের টাকা দেশেই রাখা। এ ছাড়া এ শিল্পে বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। ’
নেপথ্য থেকে চুক্তিটি সম্পাদনের জন্য শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ কৃতিত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘স্লিটার সঙ্গে এই চুক্তি নিয়ে আমি দারুণ আশাবাদী। কারণ বাংলাদেশি ছেলেমেয়েরা যারা ইতিমধ্যে ঢাকার বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা চট্টগ্রাম বিজিএমইএর সিবিআইএফটি থেকে অনার্স পাস করে বের হয়েছে তারা সবাই বেশ ভালো করছে। তাই স্লিটার কারিকুলাম এবং তাদের এক্সপার্টদের সহায়তায় পরিচালিত নতুন ডিপ্লোমা কোর্স প্রাসঙ্গিক এবং সময়োপযোগী হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ’
সিবিআইএফটি গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, তৈরি পোশাক খাতে একসময় ডিজাইন, ফ্যাশনে অন্যান্য এক্সপার্টের জন্য আমরা পুরোপুরি বিদেশিনির্ভর ছিলাম। তবে এখন এটা অনেকটা কমে আসছে। এখনো অন্তত দুই হাজার বিদেশি এক্সপার্ট এই সেক্টরে কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই সংখ্যা শূন্যতে নামিয়ে আনা। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে আগামীতে আমরা এক্সপার্ট রপ্তানি করতে পারব। ’
তিনি বলেন, ‘আরএমজি সেক্টরে এই ধরনের ডিপ্লোমা কোর্সের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শ্রীলঙ্কা টেক্সটাইল খাতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম জায়ান্ট। আগামী বছরের জুনের মধ্যে আশা করছি কোর্সটি চালু করতে পারব। সিবিআইএফটি এবং স্লিটা যৌথভাবে কোর্স কারিকুলাম নির্ধারণ করবে। অবশ্যই সমসাময়িক এবং সর্বশেষ কারিকুলামই অন্তর্ভুক্ত হবে। কোর্সের আওতায় দুই ইনস্টিটিউটের মধ্যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিনিময় হবে। চেষ্টা থাকবে কোর্স ফি নাগালের মধ্যে রাখার। ’