তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে নতুন করে হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বা ছয় মাসে বাংলাদেশ বাজারটিতে ২৫৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ কম। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ ছয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানির হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। অটেক্সার পরিসংখ্যান থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিসংক্রান্ত এ তথ্য জানা গেছে। এতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ হাজার ৭২৪ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে দেশটি। গত বছরের প্রথমার্ধে তাদের আমদানি ছিল ৩ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পোশাক। অর্থাৎ এবার আমদানি কমেছে ১ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি অর্থের হিসাবে সাড়ে ৫ শতাংশ কমলেও পরিমাণগত হিসাবে কমেছে মাত্র দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ সময়ে ৯৬ কোটি বর্গমিটারের সমপরিমাণ কাপড়ের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। গত বছরের একই সময় ৯৭ কোটি বর্গমিটার সমপরিমাণ কাপড়ের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি গত বছর থেকেই কমছে। ২০১৫ সাল শেষে ৫৪০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করে। এরপর ২০১৬ সাল শেষে ৫৩০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। তাতে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছিল ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর চলতি বছরের প্রথমার্ধ শেষে সেটি কমেছে সাড়ে ৫ শতাংশ।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমার মূল কারণ, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের সক্ষমতা হ্রাস।’ তিনি বলেন, ‘পোশাকশিল্পের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বিদেশি ক্রেতাদের সামনে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ইতিবাচক অগ্রগতি তুলে ধরা হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষে থাকা চীন চলতি বছরের প্রথমার্ধে ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে চীন রপ্তানি করেছিল ১ হাজার ১৯৫ কোটি ডলারের পোশাক। তার মানে এবার তাদের রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। এই বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম। চলতি বছরের প্রথমার্ধে তাদের পোশাক রপ্তানি ছিল ৫৩৮ কোটি ডলারের। এতে দেশটির রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা ছয় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি ভিয়েতনামের দখলে।
তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়া ২৩০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। গত বছরের প্রথমার্ধে তাদের রপ্তানি ছিল ২৪০ কোটি ডলার। তার মানে এবার ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৯৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ভারত। গত বছরের একই সময়ে তাদের রপ্তানি ছিল ২০২ কোটি ডলার। সেই হিসাবেই ভারতের রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে মেক্সিকো ১৭৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে ষষ্ঠ অবস্থানে আছে। গত বছরের প্রথমার্ধের চেয়ে এই রপ্তানি ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে উচ্চ প্রবৃদ্ধির বিচারে ভিয়েতনামের পরই মেক্সিকোর অবস্থান।