বাংলাদেশের দেড় হাজারের বেশি গার্মেন্টস কারখানার পরিদর্শন ইস্যুতে ইউরোপের ক্রেতাদের কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যাকর্ড একতরফাভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেবে না বলে মতৈক্য হয়েছে। যে কোন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকার ও কারখানা মালিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নেওয়া হবে।
ফ্রান্সের প্যারিসে অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এ ইস্যুতে অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএ সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। অবশ্য আগামী বছরের পর বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম চলমান থাকবে কিনা – তা নিয়ে এখনো কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছরের পর আরো তিন বছর বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম পরিচালনার বিরোধিতা করেছে বিজিএমইএ। সেই সঙ্গে তাদের কার্যক্রম চলাকালীন কারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা এবং নেদ্যারল্যান্ডেসের আইন অনুসরণ করারও বিরোধিতা করা হয়। অ্যাকর্ড না থাকার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বরং সব পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও স্বচ্ছ কারখানা পরিদর্শন কাঠামো গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়। এ সময় বলা হয়, আগামী বছরের পর উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যালায়েন্স না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ সরকার কিংবা বিজিএমইএকে উপেক্ষা করে এককভাবে আরো তিন বছর থাকার বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাকর্ড। এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক নয়।
জবাবে অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকেও কিছু যুক্তি তুলে ধরা হয়। এছাড়া তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিন বছর বাড়তি সময় থাকার বিষয়ে ট্রেড ইউনিয়নসহ সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে অ্যাকর্ডের উপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে তারা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
প্যারিসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ঢাকায় অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহ সভাপতি মোহাম্মদ নাসির, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে গতকাল রাতে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মোবাইল ফোনে ইত্তেফাককে বলেন, কারখানা পরিদর্শনের ক্ষেত্রে বিজিএমইএ ও অ্যাকর্ড সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারখানা পরিদর্শন কিংবা আগামী বছরের তারা থাকবে কিনা এ ইস্যুতে অ্যাকর্ড এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেবে না। আলোচনার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষার লক্ষ্যে ইউরোপের ২২৮টি ব্র্যান্ড, আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে অ্যাকর্ড অন ফায়ার এন্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়। এসব ব্র্যান্ডের পণ্য তৈরির সঙ্গে সং্শ্লিষ্ট প্রায় দেড় হাজার কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা শেষে এখন সংস্কার কার্যক্রম তদারকি করছে অ্যাকর্ড। আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে তাদের কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সমপ্রতি একতরফাভাবে তারা বাংলাদেশের আরো তিন বছর কার্যক্রমেরে মেয়াদ বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলোচ্য সময়ে সংস্কার কাজ তদারকির পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের হস্তক্ষেপ ছাড়াও তাদের কার্যক্রম নেদারল্যান্ডেসের আইনের পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে সরকার ও কারখানা মালিকপক্ষ। এর পরই এ প্রথমবারের মত উভয় পক্ষের মধ্যে এ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।