Home Bangla Recent গার্মেন্টস পণ্যের রফতানি বৃদ্ধিতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল

গার্মেন্টস পণ্যের রফতানি বৃদ্ধিতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল

শীঘ্রই অর্থ মন্ত্রণালয়ে জরুরী বৈঠক

গার্মেন্টস পণ্যের রফতানি বাড়াতে এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। ‘বড় দিন’ সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার বাজারে পোশাক রফতানি অর্ডার বাড়তে শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে যাওয়ার পর এ শিল্পে এখনও কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য কোন ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে কিনা- এসব বিষয় পর্যালোচনা করছে সরকার। শীঘ্রই অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি জরুরী বৈঠক করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। রফতানি বাড়াতে ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের মতামত ও পরামর্শ চাওয়া হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন কিনা সেটাও মাথায় রাখা হচ্ছে। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে ৬০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা কিভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে- এসব বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করার পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

সূত্রমতে, গার্মেন্টস খাতে বিনিয়োগ করতে বিদেশী উদ্যোক্তারা এখন বাংলাদেশমুখী। সবার লক্ষ্য তৈরি পোশাক খাত। দেশের গর্ব পোশাক খাতে বিনিয়োগ করতে চান তারা। চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, জার্মান, ডেনমার্ক এবং কানাডার উদ্যোক্তারা এখন ছুটে আসছেন বাংলাদেশে। বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলে ‘গ্রিন গার্মেন্টস’ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে বিদেশী উদ্যোক্তারা। এই পরিকল্পনার আওতায় সরকারের কাছে শতভাগ পরিবেশবান্ধব গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন এবং বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের কারণে বিদেশে কি ধরনের ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে সে বিষয়েও নজর রাখছে সরকার। রফতানিতে কোন বাধা তৈরি হচ্ছে কিনা সেটাও মাথায় রাখা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, গার্মেন্টস পণ্য রফতানি বাড়ানো, এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ এবং চলমান পরিস্থিতিতে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ আসছে কিনা সে বিষয়ে স্টেক হোল্ডারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তিনি বলেন, রূপকল্প-২১ সামনে রেখে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রফতানি হচ্ছে কিনা সেটাও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে কোন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কিনা সরকারের পক্ষ থেকে সে দিকটায় নজর রাখা হচ্ছে। গার্মেন্ট খাতে বিনিয়োগ করতে অনেক বিদেশী উদ্যোক্তারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এজন্য বিনিয়োগ বোর্ড ওয়ানস্টপ সার্ভিসসহ বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

জানা গেছে, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) গুলোতে বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে। তবে তারা এখন ইপিজেডের বাইরেও বেসিক গার্মেন্টসে বিনিয়োগ করতে চান। এজন্য পরিবেশবান্ধব গ্রিন গার্মেন্টস গড়ার প্রস্তাব রয়েছে তাদের। যদিও বেসিক গার্মেন্টস বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র তীব্র আপত্তি রয়েছে। তারা বলছেন, এ জাতীয় গার্মেন্টসে বিদেশী বিনিয়োগ হলে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা চাপের মুখে পড়বেন। তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। তবে এ শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগ নিরৎসাহিত করা হচ্ছে না। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে। এই বাস্তবতায় যেসব বিদেশীর আবেদন অপেক্ষমাণ রয়েছে তাদের দ্রুত অনুমতি দেয়ার জন্য বিজিএমইএকে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, গার্মেন্টস খাতে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে কি করা যায় তা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও বৈঠক করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখানে কোন বাধা নেই। বাংলাদেশের মতো এমন মুক্তনীতি পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই। শতকরা এক শ’ ভাগ বিদেশী মালিকানায় ব্যবসা করার অনুমতি রয়েছে এ দেশে। তবে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশীয় মালিকদের স্বার্থ বিবেচনা করছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি দেশের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার গার্মেন্টস রয়েছে। আর এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪১-৪৫ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া তৈরি পোশাকের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন অন্য খাতেও বিনিয়োগ ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপাশি এ খাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। দেশের ইপিজেডগুলোতে প্রায় ৭০টি (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা) শতভাগ বিদেশী মালাকানার তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও শতাধিক কারখানা রয়েছে বিদেশীদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে। মূলত শতভাগ বিদেশী মালিকানা বা যৌথ মালিকানাধীন কারখানাগুলো গড়ে উঠেছে ইপিজেডে।

এদিকে, ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ায় পরও যুক্তরাজ্যে পোশাক রফতানিতে কোন সমস্যা তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ যে পরিমাণ তৈরি পোশাক রফতানি করে, তার মধ্যে ৫৪ শতাংশ ইইউতে যায়। যুক্তরাজ্য একক রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশী পণ্যের তৃতীয় গন্তব্যস্থল।

বড় দিনের পোশাক তৈরি হচ্ছে

‘বড়দিন’ সামনে রেখে ইউরোপ-আমেরিকার বড় ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের তৈরি পোশাক যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড-ই এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পোশাকের বাজারে। খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বড় এই ধর্মীয় উৎসব সামনে রেখে পোশাক রফতানির নতুন নতুন অর্ডার আসতে শুরু করেছে। ইমেজ সঙ্কট কাটিয়ে পোশাক রফতানিতে এখন স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। বড়দিন তাদের সেই স্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই উৎসবকে সামনে রেখে পোশাকের রফতানি ১৯-২০ ভাগ বাড়তে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রচলিত এই দুই মার্কেটের পাশাপাশি লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার নতুন বাজারেও বাংলাদেশ থেকে বড়দিনের পোশাক নেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিুকর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বড়দিন সামনে রেখে পোশাক রফতানি বেড়েছে। আশা করছি, এই উৎসব সামনে রেখে এবার ১৯-২০ রফতানি প্রবৃদ্ধি হবে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর্যন্ত এসব পোশাক ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে পৌঁছানো হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here