চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) তৈরি পোশাক খাতের পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ৫৫২ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৪৮৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় পোশাক রফতানিতে ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। জুলাই-আগস্ট মাসে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত বছর আমদানি হওয়া তৈরি পোশাকের ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ জোগান দিয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসের হিসেবে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ও ভারতের বাজারে।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দুই নিটওয়্যার পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ২৮৬ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। একই সময়ে ওভেন গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে ২৬৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় নিট পোশাকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ ও ওভেন পোশাকে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। পাশাপাশি নিট ও ওভেন পোশাক রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৪ ও ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আলোচ্য খাতে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫১০ কোটি মার্কিন ডলার।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল এ্যান্ড এ্যাপারেল (অটেক্সা) প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৪ হাজার ৪৯৭ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করে। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ কম। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০৪ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছর একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৩২৩ কোটি ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে এবার রফতানি কমেছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ। রানা প্লাজা ধসের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভাল করতে পারছে না বাংলাদেশ। গত বছর ৫৩০ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পোশাক রফথানি হয়েছিল। ২০১৫ সালে রফতানি হয়েছিল ৫৪০ ডলারের পোশাক।
সেই হিসাবে গত বছর রফতানি কমেছিল ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গত রাতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি উত্থান-পতনের মধ্যে আছে সত্য। তবে বড় ধরনের পতন হবে না বলেই মনে হচ্ছে। আশা করছি, আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি বৃদ্ধি পাবে। নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মোহাম্মদ নাছির বলেন, কিছু শ্রমিক সংগঠন ও এনজিওর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে ‘শ্রমিক অধিকার নাই’ বলে অপপ্রচার ছড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় আমাদের। এসব এড়াতে বেশি দাম দিয়ে হলেও অন্য দেশে ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন দেশটির ক্রেতারা। অটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক দেশ চীন। গত জানুয়ারি-জুলাই সময়কালে দেশটিতে ১ হাজার ৪৩১ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে চীন।
গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এই রফতানি ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ কম। এই বাজারে দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানিকারক ভিয়েতনাম ৬৫২ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। তাদের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ ভিয়েতনাম থেকে গিয়েছিল। গেল সাত মাসে সেটি বেড়ে ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শীর্ষ রফতানিকারক দেশ যথাক্রমে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ভারত ২৩২ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ। গত বছর ভারতের বাজার হিস্যা ছিল ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত সাত মাসে সেটি বেড়ে ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ হয়েছে।