বিশ্বে চামড়াজাত পণ্য, অর্থাৎ জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ ইত্যাদির বাজারের আকার প্রায় ২২ হাজার কোটি ডলারের। এ বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব এখনো খুবই কম। এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বাড়ানোর বড় সুযোগ আছে। তবে বৈশ্বিক বাজার ধরতে বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষা করে চামড়া উৎপাদন করতে হবে এবং চামড়া থেকে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করতে হবে।
বৈশ্বিক চামড়াজাত পণ্যবাজার নিয়ে সম্প্রতি একটি বাজার সমীক্ষা করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক পণ্যবাজার গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেকনাভিও। ‘বৈশ্বিক চামড়াজাত পণ্যের বাজার: ২০১৭-২১’ শীর্ষক এই সমীক্ষায় দেখা যায়, গত বছর বিশ্বে চামড়াজাত পণ্য কেনাবেচা হয়েছে ২১ হাজার ৭৪৯ কোটি ডলারের। বাজারের এ আকার ২০২১ সালে ২৭ হাজার ১২১ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। বছরে গড়ে ৫ শতাংশ হারে বাড়বে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা। বৈশ্বিক জুতা ও স্যান্ডেলের বাজারের আকার ছিল ১২ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ দেশের চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ছিল ১০০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি। টেকনাভিওর বাজার সমীক্ষার সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের তুলনা করলে দেখা যায়, মোট বৈশ্বিক বাজারের শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ বাংলাদেশ দখলে নিতে পেরেছে।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এখন দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি খাত। এ খাতে বাংলাদেশ গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১২৩ কোটি ডলার আয় করেছে। সামগ্রিকভাবে গত অর্থবছর যখন রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ, সেখানে চামড়া খাতে আয় বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি।
জানতে চাইলে দেশের অন্যতম চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের চামড়ার মান বেশ ভালো। মানের দিক দিয়ে ইউরোপের চামড়া বিশ্বে সেরা। এরপরই পাকিস্তান ও বাংলাদেশের চামড়ার নাম বলা যায়। তিনি বলেন, চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজার ধরতে হলে পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া উৎপাদন করে তা দিয়ে পণ্য তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশের চামড়ার ব্যাগজাতীয় পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার চীন। বেলজিয়াম, হংকং, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্পেন, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে বেশ ভালো পরিমাণে রপ্তানি হয় ব্যাগজাতীয় পণ্য। আর চামড়ার জুতার সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি। এ ছাড়া কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণে রপ্তানি হয় বাংলাদেশের চামড়ার জুতা। এমনকি পণ্যের মান নিয়ে খুঁতখুঁতে দেশ জাপান বাংলাদেশি চামড়ার ব্যাগ ও জুতার বড় বাজারে পরিণত হয়েছে।
চামড়া খাতে উদ্যোক্তা ও লেদার টেকনিশিয়ানরা জানিয়েছেন, এ দেশের গরু ও ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল দিয়ে মেয়েদের উন্নতমানের জুতা ও ব্যাগ তৈরি করা যায়। এর কারণ, এ দেশের চামড়ার পুরুত্ব কম, এ কারণে চামড়া নরম করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশি চামড়ার উপরিভাগ খুব মিহি হয়, যা পুরুষের জুতা তৈরির জন্য উপযোগী।
চামড়া রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বৈশ্বিক বড় ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের চামড়া কেনে না। কারণ, এ দেশের ট্যানারিগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশদূষণ করার অভিযোগ রয়েছে। সাভারের চামড়া শিল্পনগরে পরিবেশবান্ধব উপায়ে উৎপাদন শুরু হলে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বাড়বে।
সম্ভাবনা দেখে সরকার এ বছর চামড়াকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, খুব সহজেই বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি স্থানীয় বাজার ১০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৪ বছরে ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। তিনি বলেন, চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন খাতে এখন ১০টির মতো কারখানা আছে, যা বিশ্বমানের। নতুন বিনিয়োগ আসছে। এখন দরকার সরকারের নীতি সহায়তা।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চামড়া খাত নগদ সহায়তা পাচ্ছে। এখন দরকার চামড়া শিল্পনগরের জমি হস্তান্তর, কর অবকাশ ও সহজ শর্তে ঋণসুবিধা।