Home Bangla Recent পোশাক খাতের সংযোগ শিল্পে নেই প্রণোদনা

পোশাক খাতের সংযোগ শিল্পে নেই প্রণোদনা

গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ এবং প্যাকেজিং

দেশের পোশাকশিল্পের আজকের এ অবস্থান তৈরিতে নেপথ্যে যে শিল্পটি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে সেটি হলো এ খাতের সবচেয়ে বড় সংযোগ শিল্প গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ এবং প্যাকেজিং। নানা প্রতিকূলতায়ও খাতটি দেশের পোশাকশিল্পের প্রয়োজনীয় পণ্যের শতভাগ জোগান দিতে সক্ষম।

ফলে পোশাকশিল্পে রপ্তানি সময় কমেছে (লিড টাইম)। অথচ এ খাতের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের কোনো পরিকল্পনা এবং নীতি সহায়তা নেই।

খাতসংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, সরকার পোশাক খাতের ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের যে লক্ষ্য স্থির করেছে তা পূরণে সহযোগী শিল্পের সক্ষমতা তৈরিতে নীতি সহায়তা এবং নগদ প্রণোদনা দেবে।

এদিকে এ খাতের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) ‘৫০ বিলিয়ন আরএমজি এক্সপোর্ট বাই ২০২১ : রোল অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং সেক্টর’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করতে যাচ্ছে।

বিজিএপিএমইএ সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।

বিজিএপিএমইএ দেশের রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ এবং প্যাকেজিং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে। এর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো গার্মেন্টস, হিমায়িত মাছ, হিমায়িত খাদ্য, সিরামিক, পাদুকা, ওষুধশিল্পসহ রপ্তানিমুখী শিল্পে তাদের পণ্য সরবরাহ করে। এসব শিল্পের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। এ শিল্পে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে।

পোশাকশিল্পের রপ্তানির পরিপূর্ণ রূপ দিতে ১৯৮৫ সালের দিকে প্রথম কার্টন দিয়ে এ শিল্পের যাত্রা শুরু হয়।

বিজিএপিএমইএ সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরের এ খাত থেকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২০ সাল নাগাদ খাতটি এক হাজার ২০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সহশিল্প হিসেবে গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং খাতের অবদানের ফলে পোশাক তার পণ্য রপ্তানিতে লিড টাইম কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বেড়েছে। তবে ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এতে সহশিল্প হিসেবে এ খাতকে এগিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা দেখা যায় না।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, প্যাকেজিং এবং অ্যাকসেসরিজ ক্ষেত্রে ২০১২-১৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয় ৩১০ কোটি ডলার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হয়েছে ৫৬০ কোটি ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৬১০ কোটি ডলার এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৬৭০ কোটি ডলার। তবে শিল্পটি দেশের তৈরি পোশাক খাতের মতো এর সহশিল্প হিসেবেও নিয়মিত বিদেশি ক্রেতাদের মাধ্যমে কমপ্লায়েন্স চাপে পড়েছে বর্তমানে। নিজস্ব জায়গা এবং সংস্কারের বিশাল অর্থের অভাবে কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স হিসেবে খুব বেশি এগোতে পারছে না। বিজিএপিএমইএ সূত্রে জানা যায়, তাদের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কারখানা ইতিমধ্যে কমপ্লায়েন্স হয়েছে। আরো ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কারখানা প্রক্রিয়াধীন। এসব কারখানা কমপ্লায়েন্স করতে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকা থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

এ প্রসঙ্গে বিজিএপিএমইএ সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান বলেন, দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৫০ বিলিয়ন ডলারের রূপকল্প বাস্তবায়নে এর সহশিল্প প্যাকেজিং এবং অ্যাকসেসরিজ খাতেও সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘পোশাক কারখানার সঙ্গে আমাদের কারখানাগুলোকেও কমপ্লায়েন্স করতে হবে। এ জন্য সরকার নগদ সহায়তা অথবা ১ অঙ্ক সুদে ঋণ দিয়ে খাতটিকে সহযোগিতা করতে পারে। কারণ ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে পোশাক খাতকে প্রায় ১৪ কোটি ডলারের সহায়তা দিতে হবে। ’ তিনি বলেন, ‘প্যাকেজিংশিল্পে ভারত ১৮ শতাংশ, চীন ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়, আমাদের সরকারও এ ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারে। ’

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের পোশাক খাতে সহশিল্প হিসেবে প্যাকেজিং এবং অ্যাকসেসরিজ খাত স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের রপ্তানি খাতে লিড টাইম কমিয়ে এনে আয় বাড়াতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। ’ ফলে ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ খাতটির সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যেগ নেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন। একই সঙ্গে কমপ্লায়েন্সে জোর দিতে হবে। তাঁর পরামর্শ, এ খাতের সক্ষমতা বাড়াতে নগদ প্রণোদনাসহ সরকারের নীতি সহায়তা জরুরি। কালকের সেমিনারে বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here