‘বিষফোঁড়া’খ্যাত বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবনটি ভেঙ্গে ফেলতে আরও সাত মাস সময় দিয়েছে আপীল বিভাগ। ভবন ভাঙ্গার জন্য আরও এক বছর সময় চেয়ে বিজিএমইএর করা আবেদনের শুনানি করে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওযাহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ রবিবার এই আদেশ প্রদান করেছে। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হাসেইন হায়দার।
গত আগস্টে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের আইনজীবী সুপ্রীমকোর্টেও সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করেন। এদিন রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে বিজিএমইএ’র পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী। গত ৯ মার্চ তিন বছর সময় চেয়ে করা আবেদন উপস্থাপন করেন বিজিএমইএর আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। পরে আদালত এ আবেদনের শুনানির জন্য ১২ মার্চ দিন ঠিক করে। ওইদিন ছয় মাসের সময় দিয়েছিল সুপীমকোর্টের আপীল বিভাগ। ভবন কর্তৃপক্ষের তিন বছর সময় চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি করে ওদিন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রীমকোর্টের তিন সদস্যের আপীল বিভাগের বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গতে ছয় মাস সময় মঞ্জুর করে আদেশ দেয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ২৮ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে ভবনটি বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কাওরানবাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজী দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওদিনই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনির উদ্দিন। পরদিন ৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙ্গার নির্দেশ দেয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) রুল জারি করে।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে। একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। পরবর্তীতে আপীল বিভাগ স্থগিত আদেশের মেয়াদ আরও বাড়ায়। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। রায়ে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলে ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির পর লিভ টু আপীল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়। পরে বিজিএমইএ আবারও এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। রিভিউতেও একই রায় বহাল থাকে।