দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক জোন মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য ৫০০ একরবিশিষ্ট একটি ব্লক বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ ব্যাপারে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
এ জন্য মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প ব্লক বরাদ্দের ব্যাপারে মতামত জানতে গতকাল শনিবার সব সদস্য বরাবর একটি সার্কুলার জারি করেছে বিজিএমইএ। এই চিঠিতে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্লট গ্রহণে আগ্রহী সদস্যদের মতামত জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান স্বাক্ষরিত সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, দেশের সর্ববৃহৎ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের নিকটবর্তী মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল রপ্তানিশিল্পের জন্য কৌশলগতভাবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই জোনটি ইতিমধ্যে অনেক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তারা এই জোনে প্লট বরাদ্দের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে।
সার্কুলারে প্রস্তাবিত ব্লকের আকার দেওয়া হয়েছে ৫০০ একর। প্রতিটি প্লট এক একর। প্রতি প্লটের প্রস্তাবিত মূল্য এক কোটি টাকা, যা কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য। এই জমি ৫০ বছরের জন্য লিজ হিসেবে দেওয়া হবে।
এই সার্কুলারের ব্যাপারে সাধারণ সদস্যদের সাড়া কেমন পাচ্ছেন—জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (শনিবার) মাত্র সার্কুলারটি জারি করা হয়েছে।
যেহেতু সাত দিনের মধ্যে আগ্রহীদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে, তাই সাত দিন পরেই বলা যাবে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে সদস্যদের আগ্রহের ওপর। ’ তিনি বলেন, ‘সরকার যেহেতু অর্থনৈতিক অঞ্চল দিচ্ছে, তাই আমরা মনে করি সেখানে আমাদের অংশ থাকা উচিত। জায়গার অভাব নেই, যে যতটুকু চায় নিতে পারে। ’
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা অনেকেই এটাকে বিরাট সুযোগ হিসেবেই দেখছেন। বিশেষ করে কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে বন্ধ হয়ে যাওয়া গার্মেন্ট মালিকরা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। সদস্যদের বিষয়টি আরো বিস্তারিতভাবে অবহিত করতে দুই দিনের মধ্যে বিজিএমইএ চট্টগ্রাম অফিস সাধারণ সভা আহ্বান করবে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার গার্মেন্টস হোম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিপুল বড়ুয়া বলেন, ‘এটা অবশ্যই আকর্ষণীয় অফার। সব ধরনের ইউটিলিটি সার্ভিস নিশ্চিত করলে সেখানে উদ্যোক্তারা অবশ্যই বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র এক-দেড় ঘণ্টার দূরত্ব। তা ছাড়া মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলেই মিনি পোর্ট স্থাপন করার কথা বলা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বিজিএমইএর উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে মতামত জানানোর জন্য সাত দিন খুবই কম সময়। ’
এই উদ্যোগের নেপথ্যে থেকে কাজ করছেন বিজিএমইএ পরিচালক সৈয়দ মো. তানভীর। পোশাকশিল্প ব্লক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কমপ্লায়েন্সগত কারণে গত দুই বছরে সারা দেশে হাজারের ওপর কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বন্ধ হয়েছে ভাড়া ভবনে কারখানা স্থাপনের জন্য। আমাদের গার্মেন্টশিল্প বিকাশের একটি বড় অন্তরায় জমির সংকট। এ ছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য পরিষেবা নিশ্চিত না হওয়ার কারণেও অনেকে বিনিয়োগ করে বসে আছেন। এ জন্য আমাদের মনে হয়েছে গার্মেন্ট উদ্যোক্তাদের জন্য স্থায়ী কোনো উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে এসব সুবিধাসহ সব কিছুই রেডি প্লট হিসেবে পাবেন বিনিয়োগকারীরা। যা একটি বিরাট সুযোগ। তা ছাড়া প্লটের মূল্যও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ’
মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গার্মেন্ট ব্লক স্থাপনের উদ্যোগকে সুযোগ হিসেবেই দেখছেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এবং ইস্টার্ন অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাছির উদ্দিন চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ফ্যাক্টরিগুলোকে এক জায়গায় আনার এটা একটা সুযোগ। কারণ এখানে সরকারি উদ্যোগেই সব ধরনের পরিষেবা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছে হওয়ায় পরিবহনগত সুবিধাও পাওয়া যাবে। ’ তবে কমপ্লায়েন্সের কারণে অনেক গার্মেন্ট মালিকই অর্থনৈতিকভাবে চরম দুরবস্থায় আছেন। নতুন করে বিনিয়োগ করার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে বিজিএমইএ উদ্যোগ নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে অনেকেই মিরসরাইয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন বলে তিনি মনে করেন।