Home Bangla Recent ব্যয় সংকোচনে পোশাক খাত

ব্যয় সংকোচনে পোশাক খাত

রানা প্লাজা ধসের পর বিদেশী ক্রেতা জোটের তদারকি বৃদ্ধি ও কমপ্লায়েন্স মেনে চলার কারণে অতিরিক্ত ব্যয়ের মধ্যে পড়েছে পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। জনবল কাঠামো ঢেলে সাজানোর মাধ্যমে তাই ব্যয়সংকোচনের নীতি গ্রহণ করেছেন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। এর অংশ হিসেবে নিয়ম মেনে ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক অবনমন নীতির মাধ্যমে কর্মীদের স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারেও উদ্বুদ্ধ করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

২০১৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (সিইপিজেড) প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের জিন্স-২০০০ কারখানায় নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিয়োগ পান মোজাম্মেল হোসেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর বেপজা ইনস্ট্রাকশন-০১ (১৯৮৯)-এর পার্ট ৬-এর ধারা ২১ অনুযায়ী প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবল হিসেবে তাকে ছাঁটাই করা হয়। একইভাবে ওই কারখানার আরো দুই নিরাপত্তারক্ষীকে তিন মাসের মূল বেতন ও আনুষঙ্গিক পাওনাদি প্রদানের মাধ্যমে ছাঁটাই করা হয়।

একই মাসের বিভিন্ন তারিখে রিজেন্সি গার্মেন্টেসের বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রায় ৬০ জন কর্মীকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দেখিয়ে ছাঁটাই করে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ম মেনে কর্মী ছাঁটাইয়ে নামলেও কেউ কেউ কর্মীদের বাধ্য করছে চাকরি ছেড়ে দিতে। এর মধ্যে রিজেন্সি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের একাধিক উচ্চপর্যায়ের কর্মীকে কোনো কারণ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

জানতে চাইলে জিন্স-২০০০-এর মহাব্যবস্থাপক নাসির আলম খান বণিক বার্তাকে বলেন, নিয়মিত রিক্রুটমেন্ট ও ছাঁটাই কার্যক্রমের অধীনে জনবল কাঠামোর পরিবর্তন হয়। যেকোনো শিল্প-কারখানার এটি নিয়মিত বিষয়। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হিসেবে সেপ্টেম্বরে তিনজন কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

চট্টগ্রামের একাধিক বড় প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই মাস ধরে সিইপিজেডের বেশকিছু কারখানায় কর্মী ছাঁটাই প্রক্রিয়া চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়মের মধ্যে থেকেই অতিরিক্ত জনবল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্যাসিফিক গ্রুপ, শ্রীলংকাভিত্তিক রিজেন্সি গার্মেন্টস, সানম্যান গ্রুপসহ একাধিক কারখানা থেকে এক হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আরো কর্মী ছাঁটাই করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারাও।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন পোশাক খাতের একাধিক উদ্যোক্তা। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সসহ কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা নানা জটিলতার মুখে পড়েছেন। এর পরও দেশের রফতানি আয় ধরে রাখতে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে শতভাগ কমপ্লায়েন্সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে জনবল কাঠামোয়ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। দক্ষ ও কার্যকর লোকবল নিয়োগের পাশাপাশি সুষম কর্মী ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু অতিরিক্ত লোকবল ছাঁটাই করতেই হবে। শ্রম আইন মেনেই কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে।

বিজেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, একসময় চট্টগ্রামে দুই হাজারের অধিক  তৈরি পোশাক কারখানা থাকলেও বর্তমানে এর সংখ্যা কমে গেছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ৬৭৬টি পোশাক কারখানা বিজেএমইএর সদস্য হিসেবে নিবন্ধিত থাকলেও চালু রয়েছে ৩৭৩টি। বাকি ৩০৩টি কারখানা কার্যাদেশ না পাওয়ায় আপাতত বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি আমদানি-রফতানি করছে ২৫০টি। বাকি ১৪১টি কারখানা সাবকন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে কাজ করছে। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণ করতে না পারায় ও রফতানি আদেশ সংকটে পাঁচ বছরে বন্ধ হয়েছে প্রায় ২৮৫টি কারখানা। ২০১৬ সালেই বন্ধ হয়েছে ১০০টির বেশি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here