গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এছাড়া গার্মেন্টস খাতের নারী শ্রমিকরা উদ্যোগ নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করলে দ্রুত নিবন্ধন দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যুনতম মজুরি বৃদ্ধির ইস্যুটি সম্প্রতি সামনে এসেছে। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এ খাতের মজুরি বোর্ড গঠনের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনায় মালিকপক্ষের চিঠি দেওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে বিরল। যদিও এর আগেই শ্রমিক সংগঠনগুলো মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল। ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলও (আইবিসি) মজুরি বাড়ানোর জন্য বিজিএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে আলাদা চিঠি দিয়েছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আইবিসি’র সাধারন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মজুরি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া না হলে আগামী বছরের শুরু থেকে বসে থাকবো না বলে আন্দোলনের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের জুনে এ খাতের শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। আর একই বছরের ডিসেম্বর থেকে নতুন ন্যুনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা দেয় সরকার। বর্তমানে গার্মেন্টস খাতে সর্বনিম্ন মজুরি ৫ হাজার ৩শ’ টাকা। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর মজুরি বোর্ড গঠনের কথা রয়েছে। সেই বিবেচনায় আগামী বছরের ডিসেম্বরে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা। কিন্তু বাড়িভাড়া ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্দ্ধগতির কারনে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবি জোরালো হচ্ছে।
দেশে এ খাতের শ্রমিকদের জন্য ১৯৮৪ সালে প্রথম মজুরি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় শ্রমিকদের ন্যুনতম মোট মজুরি ছিল ৬৩০ টাকা। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে ৯৩০ টাকা, ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৬২ টাকা, ২০১০ সালে ৩ হাজার টাকা ও ২০১৩ সালে ৫ হাজার ৩শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, বিশ্বে এখনো বাংলাদেশেই শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে কম। ডলারের হিসেবে গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশে মজুরি প্রায় ৬৮ ডলার। মায়ানমারে ৯৭ ডলার। কম্বোডিয়ায় ১৭০ ডলার, ভিয়েতনামে ১৬০ ডলার, চীনে ২২৩ থেকে ২৪০ ডলার, ভারতে রাজ্যভেদে ৭ হাজার থেকে ৯ হাজার রুপি এবং পাকিস্তানে প্রায় ১৫ হাজার রুপি।
পোশাক শিল্পে নারী-পুরুষ সহিংসতা রোধে নতুন কর্মসূচী ‘গার্মেন্টস শিল্পে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বন্ধে একটি উদ্যোগ’ শীর্ষক কর্মসুচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনাকালে মন্ত্রী মজুরি পর্যালোচনার বিষয়টি সামনে আনেন। ব্র্যাক, গ্লোবাল ফান্ড ফর উইমেন্স, খ্রিশ্চিয়ান এইড, ব্লাস্ট, নারী পক্ষ ও এসএনভি যৌথভাবে এই কর্মসুচি গ্রহণ করেছে।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, পোশাক কারখানাসহ সকল কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে শ্রমিক-মালিক সকলের মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। ইতিমধ্যে পোশাক খাতে কর্মপরিবেশের উন্নয়নের সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা কমে আসছে। এ ধরনের সহিংসতার মূলোত্পাটনে শুধু আইন কাজে দেবেনা। নারী পুরুষের একে অন্যের প্রতি সম্মান এবং আস্থার জায়গা তৈরি না হলে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বন্ধ হবেনা। এ বিষয়ে শ্রমিক-মালিকের মধ্যে সুসম্পর্কের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে সংগঠনগুলোরা তত্পরতাও বাড়াতে হবে। শুধু নারী শ্রমিকরা উদ্যোগ নিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করলে সহজে নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ড.মোঃ আনোয়ার উল্লাহ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসে, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি প্রমুখ বক্তব্য দেন।