Home Bangla Recent টিপিপি হলে ক্ষতি হবে বাংলাদেশের

টিপিপি হলে ক্ষতি হবে বাংলাদেশের

প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১১ দেশের অবাধ বাণিজ্য বিষয়ক ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (টিপিপি) কারণে ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। বিশেষ করে পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম জোটের বাকি দেশগুলোতে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধায় একচ্ছত্র রফতানির সুযোগ পাবে। এতে কানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বাজারে রফতানিতে ভিয়েতনামের কাছে মার খাবে বাংলাদেশ।

অনেক অনিশ্চয়তার পর শেষ পর্যন্ত টিপিপি চুক্তি হচ্ছেই। যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই এ চুক্তিকে এগিয়ে নিতে অনেকটা সমঝোতায় পৌঁছেছে বাকি দেশ। গত শনিবার ভিয়েতনামে এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশনের (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে টিপিপির দেশগুলোর মন্ত্রীদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এশিয়াজুড়ে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য ঠেকাতে নতুন এ চুক্তি নিয়ে অন্য দেশের তুলনায় জাপানের আগ্রহ একটু বেশি। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে জাপানের অর্থমন্ত্রী তোসিমিতসু মোতেজি বলেন, তাদের আশা, চুক্তি নিয়ে অগ্রগতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আবার ফিরতে পারে। শেষ পর্যন্ত টিপিপি হলে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যে কোনো ধরনের শুল্ক্ক বাধা থাকবে না। গত বছর এ দেশগুলোর মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩৫৬ বিলিয়ন ডলার। টিপিপি জোটের অন্য দেশগুলো হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ব্রুনাই দারুস সালাম, কানাডা, চিলি, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম।

এতদিন টিপিপির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়টিকেই বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েও চুক্তি হলেও বাংলাদেশকে বেশ সমস্যায় পড়তে হবে বলে মনে করেন বাণিজ্য-বিশ্নেষক এবং রফতানিকারকরা। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সমকালকে বলেন, ভিয়েতনামের কারণে টিপিপিকে ভয় করতেই হবে। একই সঙ্গে চীনও একটা বড় ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, টিপিপিতে চীন না থাকলেও ওই ১১ দেশে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা নিতে চীনা উদ্যেক্তারা ভিয়েতনামে কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছেন। আবার শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে সংশ্নিষ্ট দেশের ক্রেতারাও নতুন করে ভিয়েতনামের প্রতি ঝুঁকবেন। এর আগে টিপিপি চুক্তি নিয়ে আলোচনা গতি পাওয়ার পর অন্যান্য দেশের ক্রেতাদের সঙ্গে মার্কিন ক্রেতারাও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে প্রায় একই রকম পর্যবেক্ষণ দিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, নতুন টিপিপিতে রফতানি খাতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম হবে নতুন হুমকি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র না থাকলেও কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাজার। টিপিপির সুবিধায় এসব দেশে রফতানিতে আরও এগিয়ে যাবে দেশটি। কারণ, সহজ ব্যবসা পরিচালনার বৈশ্বিক সূচকসহ অন্যান্য অনেক সূচকে বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে আছে ভিয়েতনাম। এখন করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্ব আসরে জায়গা করে নিতে বাংলাদেশকেও বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য জোটে প্রবেশের উদ্যোগ নিতে হবে।

টিপিপির মূল উদ্যোক্তা ছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় ২০১৫ সালের অক্টোবরে টিপিপির খসড়া চুক্তি সই হয়। এ চুক্তির ফলে নিজেদের মধ্যে আন্তঃরফতানিতে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল জোটভুক্ত দেশগুলোর। গত বছর নিউজিল্যন্ডের অকল্যান্ডে এ সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে চুক্তিতে সই করেন সংশ্নিষ্ট দেশগুলোর বাণিজ্যমন্ত্রীরা। তবে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে নিজেদের পার্লামেন্টের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। অনেক দেশের পার্লামেন্ট এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। তবে নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, ক্ষমতায় এসেই টিপিপিতে না থাকার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here