Home Bangla Recent পোশাক খাতে মূল্য সংযোজন কমছে

পোশাক খাতে মূল্য সংযোজন কমছে

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য হ্রাস ও ক্রমাগতভাবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তৈরি পোশাক খাতে মূল্য সংযোজন কমছে। গত তিন অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে মূল্য সংযোজন কমেছে দশমিক ৬০ শতাংশ। এর সঙ্গে শিল্পের গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, অবকাঠামোর অপ্রতুলতা ও অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের খবরদারি উদ্যোক্তাদের চিন্তিত করে তুলেছে।

তৈরি পোশাক খাতের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পর্যালোচনা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে নিট এবং ওভেন মিলিয়ে তৈরি পোশাক খাতের মূল্য সংযোজন হয়েছে ৭৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। এ সময় ৭০১ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানির বিপরীতে রফতানি হয়েছে ২ হাজার ৮১৪ কোটি ডলারের পণ্য। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন হয়েছে ৭৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মোট ২ হাজার ৮১০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানির বিপরীতে আমদানি হয়েছে ৬৯২ কোটি ডলার। একইভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন হয়েছে ৭৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। যদিও এ মূল্য সংযোজনের হিসাব নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মনে প্রশ্ন রয়েছে।

জানা গেছে, নিট খাতে বাড়লেও ওভেন খাতের মূল্য সংযোজন কমছে। এর কারণ নিটওয়্যার শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলা আমদানির পর স্থানীয় পর্যায়ে সেটি থেকে প্রথমে সুতা এবং পরবর্তীতে কাপড় তৈরি করা হয়। এ কারণে নিট খাতে মূল্য সংযোজন বেশি। কিন্তু ওভেন খাতে বিদেশি ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী কাপড় ব্যবহার করে পোশাক বানিয়ে সেটি রফতানি করতে হয়। তাই আমদানি করা কাপড়ের কারণে বিদেশে টাকা চলে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এ কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূলত তৈরি পোশাকের মূল্য সংযোজন কমছে।

মূলত রফতানি মূল্য থেকে আমদানি করা কাঁচামালের মূল্য বাদ দিয়ে বাকি যেটি অবশিষ্ট থাকে সেটিকে তৈরি পোশাকের মূল্য সংযোজন বোঝায়। অর্থাৎ স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল ও সেবাকে মূল্য সংযোজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিগত বছরগুলো তৈরি পোশাকের পশ্চাৎপদ শিল্পের প্রসারের কারণে মূল্য সংযোজন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি সেটি ম্লান করে দিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তৈরি পোশাক খাতের কর্মরত বিদেশিদের উচ্চ বেতন কাঠামো।

এক হিসাব মতে, প্রতি বছর বিদেশিরা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে পোশাক খাতে কর্মরত বিদেশির সংখ্যাই বেশি।

পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন বেশিরভাগ তৈরি পোশাক কারখানা হাইভ্যালু আইটেম (দামি পোশাক) রফতানির দিকে মনোযোগী হচ্ছেন। এ ধরনের পোশাক তৈরিতে বিদেশি ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী গুণগত মানের কাপড়-সুতা আমদানি করতে হচ্ছে। কারণ স্থানীয় পর্যায়ে এখনও এ ধরনের পোশাক তৈরির কাপড় ও সুতা উৎপাদন হচ্ছে না। একদিকে পণ্যের মূল্য হ্রাস পেয়েছে অন্যদিকে কাপড়ের (ফেব্রিক্স) দাম বেড়েছে। এ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে স্থানীয় কাঁচামালের দামও বেড়েছে। এসব কারণে তৈরি পোশাকের মূল্য সংযোজন কমেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মূল্য সংযোজন হার কমে যাওয়ার একটি কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের দাম এবং সিএম (কাটিং মেকিং) খরচ কমে যাওয়া। বর্তমানে হাইভ্যালু আইটেমের তৈরি পোশাক রফতানি বাড়লেও এ কারণে মূল্য সংযোজন বাড়ছে না। পাশাপাশি ওভেন খাতে ৬০ থেকে ৬২ শতাংশ কাপড় আমদানিও আরেকটি কারণ।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তৈরি পোশাক খাতে মূল্য সংযোজনের সংখ্যাটি একটু বেশি মনে হয়। এ ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতিতে হিসাব করা হচ্ছে সেটি দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইউরোপ উৎস বিধির শর্ত শিথিল করায় ওভেন খাতে কাঁচামাল আমদানির প্রবণতা বেড়ে গেছে। আবার পণ্যের কাঁচামালের আমদানির তুলনায় রফতানির গড় মূল্য কমেছে (টার্মস অব ট্রেড)। এ কারণে মূল্য সংযোজন কমছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here