পোশাক শ্রমিকদের নুন্যতম মজুরি বাড়ছে। বর্তমান পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা থেকে কত বাড়ানো হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এ-সংক্রান্ত মজুরি বোর্ড। তবে এবার বোর্ড গঠন এবং অন্যান্য বিষয়ে আগেভাগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতামত এবং পরামর্শ নেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত মজুরি বোর্ডের নির্ধারণ করা নূ্যনতম মজুরি প্রথমে মানতে রাজি হয়নি মালিক পক্ষ। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে মজুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নেন তারা।
শ্রম আইনে প্রতি ৫ বছর অন্তর মজুরি পর্যালোচনা করার কথা। পোশাক শ্রমিকদের সর্বশেষ মজুরি বেড়েছে ২০১৩ সালে।
সম্প্রতি শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মজুরি পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে বোর্ড গঠনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। পোশাক খাতে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশে-বিদেশে পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি রক্ষায় মজুরি বোর্ড গঠনের অনুরোধ জানানো হয়। অন্যদিকে মজুরি পুনর্নির্ধারণে বিজিএমইএর প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে ছোট এবং ছোট-মাঝারি কারখানাগুলো। এসব কারখানার মালিকরা মনে করেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন তারা।
জানতে চাইলে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেন, বিজিএমইএ চিঠিতে সরাসরি মজুরি বাড়ানোর প্রস্তাব করেনি। তারা পুনর্নির্ধারণের কথা বলেছে। তবে পুনর্নির্ধারণ করা মানেই আসলে মজুরি বাড়ানোই। এখন মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মালিক এবং শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে বোর্ড গঠন করা হবে। তবে তার আগে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতামত এবং পরামর্শ নেবেন তিনি। কবে নাগাদ মজুরি বোর্ড গঠন হতে পারে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখের কথা বলেননি প্রতিমন্ত্রী। শ্রমিক সংগঠনগুলো ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের ঘোষণা চায়।
জানা গেছে, মূলত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপেই মজুরি বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বিজিএমইএ। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅলের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার, ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) পক্ষ থেকে বিজিএমইএর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জরুরিভিত্তিতে মজুরি বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। গত ১৭ অক্টোবর বিজিএমইএ সভাপতি বরাবরে এ চিঠি পাঠিয়েছেন আইবিসির মহাসচিব তৌহিদুর রহমান। চিঠিতে নতুন মজুরির বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে শ্রমিক বা শ্রমিক সংগঠনের কোনোরূপ আন্দোলন-সংগ্রাম বা অসন্তোষ গড়ে ওঠার আগেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। পরদিন একই বক্তব্য সংবলিত একটি চিঠি শ্রম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের নজরে আনেন তারা।
এ বিষয়ে আইবিসি মহাসচিব সমকালকে বলেন, চালের মূল্যবৃদ্ধি, অনিয়ন্ত্রিত বাড়িভাড়া ও দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির কারণে পোশাক খাতের ৪৫ লাখ শ্রমিকের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে, যা টেকসই শিল্পের জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়। তিনি দাবি করেন, মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সব শ্রমিক সংগঠনই একমত। শিগগিরই গোলটেবিল বৈঠক ডেকে মজুরি নির্ধারণ করে দাবি তোলা হবে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সমকালকে বলেন, কারও চাপে নয়, স্বপ্রণোদিত হয়েই তারা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা চান, স্বাভাবিক নিয়মেই শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পাক। তিনি অভিযোগ করেন, এক শ্রেণির অসাধু শ্রমিক নেতা নিরীহ শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়ে ভাংচুর করা, কর্মবিরতিসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানোর পাঁয়তারা করছেন। বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার মজুরি পুনর্নির্ধারণে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
সর্বশেষ গত ২০১৩ সালের নভেম্বরে নূ্যনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার এক মাস পর ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। সে অনুযায়ী এন্ট্রি লেভেলে একজন শ্রমিক নিম্নতম পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। ষষ্ঠ গ্রেডে ৫ হাজার ৬৭৮ টাকা, পঞ্চম গ্রেডে ৬ হাজার ৪২, চতুর্থ গ্রেডে ৬ হাজার ৪২০, তৃতীয় গ্রেডে ৬ হাজার ৮০৫, দ্বিতীয় গ্রেডে ১০ হাজার ৯০০ ও প্রথম গ্রেডে ১৩ হাজার টাকা নূ্যনতম মজুরি নির্ধারিত আছে। এ ছাড়া বছরে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া বাধ্যতামূলক। শ্রম আইন অনুযায়ী, ৫ বছর পর পর নিম্নতম মজুরি পর্যালোচনা করা যায়। এ ছাড়া বিশেষ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় যে কোনো পর্যায়ে নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে নিম্নতম মজুরি ঘোষণার নিয়ম আছে।