যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে গত নয় মাসে চীনের হিস্যা কমেছে দশমিক ৬৬ শতাংশ। চীনের সেই হারানো ব্যবসা নিয়ে নিচ্ছে ভিয়েতনাম। সব মিলিয়ে তাদের বাজার হিস্যা পৌনে ১ শতাংশ বেড়েছে। তবে পারছে না বাংলাদেশ। হিস্যা বাড়ানো তো দূরের কথা, আগের অবস্থানই ধরে রাখতে পারছে না বাংলাদেশ।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, গত বছর সারা বিশ্ব থেকে ৮ হাজার ৭১ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক কিনেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ বা ২ হাজার ৭৯২ কোটি ডলারের পোশাক ছিল চীনের।
চলতি বছরের নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২ হাজার ৪১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে তারা রপ্তানি করেছিল ২ হাজার ১২৪ কোটি ডলার। তাতে এবার তাদের রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। একই সঙ্গে দেশটির বাজার হিস্যা কমে ৩৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৩৯৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৪১৭ কোটি ১৯ লাখ ডলারের পোশাক। সেই হিসাবে এবার বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। রপ্তানি কমার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত বছর হিস্যা ছিল ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমলেও ভিয়েতনামের বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৭০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দেশটির রপ্তানি সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে। বাজার হিস্যাও বেড়ে ১৪ দশমিক ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য গত বছর শেষে তাদের হিস্যা ছিল ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তার মানে তাদের হিস্যা বেড়েছে দশমিক ৮১ শতাংশ।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান গতকাল সোমবার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের পোশাক রপ্তানি খুব বেশি কমবে না। আবার খুব বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। তার কারণ হচ্ছে, পোশাক উৎপাদনে বড় সক্ষমতা ও দক্ষতা থাকলেও লিড টাইম ও পশ্চাৎমুখী শিল্পে পিছিয়ে পড়ছি আমরা। তা ছাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে চীনের পোশাক রপ্তানি কমছে। সেই ব্যবসা ধরতে হলে আমাদের লিড টাইম কমিয়ে আনতে হবে। এ জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট যত দ্রুত সম্ভব নিরসন করতে হবে। অন্যথায় ব্যবসা অন্য দেশে যাবেই।’
অবস্থান কিছুটা দুর্বল হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে। শীর্ষে বরাবরের মতো আছে চীন। দ্বিতীয় ভিয়েতনাম। চতুর্থ অবস্থানে আছে ইন্দোনেশিয়া। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ইন্দোনেশিয়া ৩৪৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছরের একই সময়ে ৩৬৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল ইন্দোনেশিয়া। সেই হিসাবে এবার তাদের রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ার বাজার হিস্যা ৫ দশমিক ৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য গত বছর শেষে তাদের হিস্যা কিছুটা বেশিই ছিল, ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি পঞ্চম অবস্থানে আছে ভারত। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে তারা রপ্তানি করেছে ২৯০ কোটি ডলারের পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। ভারতের বাজার হিস্যা বর্তমানে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গত বছর শেষে তাদের হিস্যা ছিল ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। তার মানে চলতি বছরের নয় মাস শেষে ভারতের বাজার হিস্যা সামান্য বেড়েছে।
অটেক্সার হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৬ হাজার ৭৫ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের একই সময়ে তারা ৬ হাজার ১৬২ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল। সেই হিসাবে এবার ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম পোশাক কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র।