জাতীয় উদ্যোগে পোশাক শিল্প মূল্যায়ন কার্যক্রমের আওতায় আছে প্রায় দেড় হাজার কারখানা। এসব কারখানার বিভিন্ন ত্রুটি এরই মধ্যে শনাক্ত হয়েছে। একাধিকবার তাগাদা দিলেও অধিকাংশ কারখানাই এসব ত্রুটি সংশোধন করেনি। এ ধরনের প্রায় সাড়ে ৮০০ কারখানাকে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ত্রুটি সংশোধনে ব্যর্থ হলে বিদ্যমান স্থানে উৎপাদন করতে পারবে না কারখানাগুলো।
জাতীয় উদ্যোগে মূল্যায়ন কার্যক্রমের আওতায় থাকা ১ হাজার ৫৪৯টি কারখানা প্রাথমিক পরিদর্শনের পর ঝুঁকির মাত্রাভেদে সেগুলোকে গ্রিন, ইয়েলো, অ্যাম্বার ও রেড শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। গ্রিন শ্রেণীভুক্ত কারখানাগুলো নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত। ইয়েলো শ্রেণীর কারখানাগুলোকে নিরাপদ বলা হলেও চার ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে। অ্যাম্বার শ্রেণীভুক্ত কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে। আর রেড শ্রেণীর কারখানাগুলো অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে। ইয়েলো, অ্যাম্বার ও রেড শ্রেণীভুক্ত কারখানাগুলোকে সংস্কারকাজ সম্পন্নের তাগাদা দিতে শুরু করেছে সরকার।
গতকাল যোগাযোগ করা হলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) মহাপরিদর্শক সামছুজ্জামান ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, জাতীয় উদ্যোগের আওতায় থাকা সব কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। চিহ্নিত ত্রুটি সংশোধনে কারখানা মালিকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত তাদের সময় দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ত্রুটি সংশোধন করতে না পারলে কারখানাগুলোর বিদ্যমান স্থানে উৎপাদন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।
তিনি বলেন, আইন আমাদের যে ক্ষমতাটুকু দিয়েছে, সেটাই আমরা প্রয়োগ করব। যেসব কারখানা রফতানিমুখী, সেগুলোর ইউডি সেবা বন্ধ করা হবে। নিবন্ধন বাতিল করা হবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে বিদ্যমান স্থানে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। এমন কারখানার সংখ্যা ৮০০-৮৫০। বেঁধে দেয়া সময় শেষ হলে আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাতীয় কমিটিকে জানানো হবে। তখন তারাই ব্যবস্থা নেবে।
মূল্যায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে মোট ৩১৯টি কারখানাকে অ্যাম্বার শ্রেণীভুক্ত করা হয়। এসব কারখানাকে কারিগরি মূল্যায়ন (ডিইএ) ও সংশোধনমূলক পরিকল্পনা (সিএপি) বাস্তবায়নসাপেক্ষে উৎপাদন সচল রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিইএ ও সিএপি বাস্তবায়নের নির্দেশনা পরিপালনে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ। এমনকি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের মাধ্যমে কারখানাগুলোর কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি। এ অবস্থায় আগামী এপ্রিল পর্যন্ত বেঁধে দেয়া সময় শেষ হলে কারখানাগুলোকে বন্ধের নির্দেশনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি সংস্থা।
এর আগে কারখানা মালিকদের চিঠি পাঠিয়ে তাগাদা দিয়েছিল ডিআইএফই। চিঠিতে বলা হয়, আপনার কারখানা ভবনের প্রিলিমিনারি অ্যাসেসমেন্ট ও কারেক্টিভ অ্যাকশন প্ল্যান (সিএপি) এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আপনি সিএপি বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এছাড়া স্ট্রাকচারাল, ফায়ার ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসেসমেন্টের আলোকে কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় সিএপির আলোকে সংশোধন কার্যক্রম শুরু করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ-বিষয়ক অগ্রগতি এ দপ্তরকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় শ্রম আইন অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, ডিইএর আওতায় কারখানা ভবনগুলোর ‘অ্যাজ বিল্ট’ নকশা নিরূপণ করতে হচ্ছে। পরীক্ষা করতে হচ্ছে ভবনের তলদেশের মাটিও। আবার কংক্রিট পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি যাচাই করা হচ্ছে ভবনের কলামের সামর্থ্য। এছাড়া কোন কলামগুলোর ভিত আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করতে কারখানার নমুনাও তৈরি করতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স বা জাতীয় উদ্যোগ যাদের আওতায় যে পোশাক কারখানা আছে, সবাইকে ব্যবসা করতে হলে কমপ্লায়েন্ট হতে হবে। এ বিষয়ে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এসব কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় আমরা নিতে চাই না। শ্রমিক ও মালিক উভয়ের স্বার্থে কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।