বাংলাদেশে আমেরিকাভিত্তিক কারখানা পরিদর্শন জোট অ্যালায়েন্সের আওতায় থাকা প্রায় ৬শ’ পোশাক কারখানা তাদের ত্রুটির ৮৫ শতাংশ সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাদবাকী সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে ওই জোট। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনের অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতিমধ্যে ২৩৪টি কারখানা তাদের সব ধরণের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছে। আর সংস্কারে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় ১৭১টি কারখানার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে। এসব কারখানার অ্যালায়েন্সভুক্ত কোন ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কোন ধরণের ব্যবসা করতে পারবে না। প্রতি তিন মাস পর পর কার্যক্রমের অগ্রগতি জানিয়ে থাকে অ্যালায়েন্স। এরই অংশ হিসেবে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশের অ্যালায়েন্সের নির্বাহি পরিচালক ও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি।
জেমস এফ মরিয়ার্টি গত চার বছরের বেশি সময় ধরে অ্যালায়েন্সের বিভিন্ন কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের কার্যক্রম শুরুর সময়ের চাইতে কারখানাগুলো এখন পরিস্কারভাবে নিরাপদ। এটি অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য আগামী বছর অ্যালায়েন্সের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর এ দায়িত্ব নেবে সরকার। কারখানাগুলোর সংস্কার কার্যক্রম অব্যহত রাখা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার পরিচালিত তদারক কার্যক্রম স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য, স্বাধীন ও কারিগরিভাবে সক্ষম হতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার গঠিত সংস্কার সমন্বয় সেলকে (আরসিসি) সহযোগিতা করতে প্রস্তুত অ্যালায়েন্স।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষার লক্ষ্যে ব্র্যান্ডদের সমন্বয়ে অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। এতে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ ব্র্যান্ডই উত্তর আমেরিকাভিত্তিক। অ্যালায়েন্স প্রায় ৬শ’ কারখানা পরীক্ষা করে তাদের ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে তা সংশোধনের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়। একই সঙ্গে ইউরোপের ক্রেতাদের সমন্বয়ে অ্যাকর্ড নামে আলাদা একটি জোটও কাজ করছে। ওই জোটের আওতাভুক্ত কারখানার সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। আগামী বছরের জুন নাগাদ উভয় জোটের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু কারখানা সংস্কার তদারকিতে ইতিমধ্যে কিছু প্রশ্ন উঠায় উভয় জোটের কার্যক্রম শেষে এখানে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি তৈরি হয় মালিক পক্ষ ও সরকারের তরফে। এরই মধ্যে অ্যাকর্ড আগামী বছরের পর আরো তিন বছর এখানে কাজ করার বিষয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নিলে সরকার ও মালিকপক্ষ তার তীব্য বিরোধতা করে। অবশ্য অ্যালায়েন্স বিভিন্ন ফোরামে বলে আসছিল, মেয়াদ শেষে তারা কার্যক্রম দীর্ঘায়িত করতে চায়না। গতকাল জেমস এফ মরিয়ার্টি সাংবাদিকদের তা পরিস্কার করলেন। তবে এর পর আরসিসি’র আওতায় এ কার্যক্রমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মরিয়ার্টি বলেন, এ তদারকি বিশ্বাসযোগ্য হওয়া দরকার। অ্যালায়েন্স তা নিশ্চিত হতে চায়। এছাড়া অ্যালায়েন্স চলে যাওয়ার পর কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখার দায়িত্ব ব্র্যান্ডের বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ব্র্যান্ডগুলো যেসব কারখানা থেকে পোশাক ক্রয় করে, তার নিরপত্তা ব্যবস্থা তারা দেখবে।
এ সময় জানানো হয়, গত চার বছরের বেশি সময়ে ১৪ লাখ শ্রমিককে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৩ লাখ শ্রমিক অ্যালায়েন্সের হেল্পলাইনে সরাসরি ফোন করে তাদের কথা জানানো সুযোগ পেয়েছে। ২৭ হাজার সিকিউরিটি গার্ডকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।