ইউরোপের বাজারে ডেনিম পোশাকের জন্য বাংলাদেশ প্রধান রফতানিকারক দেশ হিসেবে কাজ করছে। আমেরিকাতেও রফতানিকারক হিসেবে প্রধান পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। চীন,ভারত কিংবা পাকিস্তানে তৈরি ডেনিম জিন্সের তুলনায় বাংলাদেশে তৈরি ডেনিম জিন্স কোন অংশেই পিছিয়ে নেই, বরং গুণে-মানে বাংলাদেশের ডেনিম জিন্স অনেকখানি এগিয়ে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রচার ও প্রসারে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তবে বৈশ্বিক বাজারে আরও প্রসারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে দুই দিনব্যাপী শুরু হওয়া বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজকরা এসব কথা বলেন। সপ্তমবারের মতো এবারের প্রদর্শনীর মূল সেøাগান হলো ‘স্বচ্ছতা’। এ প্রদর্শনী চলবে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এতে বাংলাদেশ ছাড়াও ১১টি দেশের ৬৫ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছেন। বরাবরের মতো ডেনিম এক্সপো আয়োজন করেছে ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ১৮টি স্থানীয় এবং ৪৭টি অন্যান্য দেশের। এবারের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে জার্মানি, চীন, হংকং, ভারত, ইতালি, জাপান, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, স্পেন, তুরস্ক এবং ভিয়েতনাম। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আমন্ত্রিত দর্শণার্থীদের জন্য প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে।
আয়োজক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর এই ৭ম সংস্করণ দেশের পোশাক শিল্পের জন্য এক নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দেশের পোশাক শিল্পের স্বচ্ছতা তুলে ধরার মাধ্যমে ডেনিম রফতানি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করাই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য। এই এক্সপোতে সারা বিশ্ব থেকে রেকর্ডসংখক ১২ হাজারেরও বেশি দর্শক অনলাইনে প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। আয়োজকরা জানান, ক্রেতা ও ভোক্তার কাছে পোশাক উৎপাদনের স্থান ও প্রক্রিয়া যথাযথভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে সাপ্লাই চেনে স্বচ্ছতা আনায় গুরুত্ব দিয়ে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রদর্শনীতে ভিন্নধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত শীর্ষ পণ্য ও এক্সপোর থিমের ওপর ভিত্তি করে তাদের কার্যক্রম প্রদর্শন করবে, যা সম্পূর্ণ ডেনিম সরবরাহকারী চেনকে প্রতিনিধিত্ব করবে।
বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ডেনিম বা জিন্স ফেব্রিক্স ও গার্মেন্ট তৈরিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার পাশাপাশি সম্পূর্ণ ডেনিম ভ্যালু চেনের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি এবং ব্যবসার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করাও এ আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা বলতে এখানে শ্রমিকের অধিকার ও কল্যাণের বিষয়টি নজরদারি ও দায়িত্বশীলতার আওতায় নিয়ে আসাকে বোঝানো হচ্ছে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সরকার অনেক কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া, বন্দরে অদক্ষতা, অপর্যাপ্ত রেল এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, গ্যাস এবং বিদ্যুত সঙ্কট সমাধানসহ একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। কাপড়ের জন্য বাইরের উৎসের ওপর নির্ভরশীল না হওয়াটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের এখনও প্রায় ৬০ শতাংশ ডেনিম কাপড় আমদানি করতে হয়। সেজন্য আমাদের গবেষণা, উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের ওপর আরও জোর দিতে হবে। তবে পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বকে দেয়ার মতো অনেক কিছু আছে বাংলাদেশের। সবার আগে আমাদের দেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে।
শাশা ডেনিম লিমিটেডের এজিএম মাসুদ দেওয়ান বলেন, বাংলাদেশী ডেনিম হচ্ছে ওয়ার্ল্ড বেস্ট। আমরা এবারের যে তিনটি ফ্যাব্রিক্স নিয়ে এসেছি তা একদম ইনোভেটিভ। ফলে বিদেশী ক্রেতারা আগ্রহও ভাল দেখাচ্ছেন। আশা করা যায়, আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশী ডেনিম জিন্স তার সকল প্রতিপক্ষ থেকে অনেক এগিয়ে যাবে। বেক্সিমকো টেক্সটাইলের স্টলের কর্মকর্তা সৌরভ বলেন, চীন,ভারত ও পাকিস্তানের ডেনিম জিন্স থেকে বাংলাদেশের ডেনিম জিন্সের মার্কেট চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়া আমরা যতটা কম দামে ডেনিম জিন্স দিতে পারব তা অন্য কোন দেশ দিতে পারবে না। ফলে আমাদের সম্ভাবনা (পটেনশিয়াল) ডেনিমের ক্ষেত্রে বেশি। এভাবে প্রচার ও প্রসার হলে আমরা খুব দ্রুত এগিয়ে যাব রফতানিতে।
প্রথম দিনের প্রদর্শনীতে ‘পোশাকের ফ্যাশনে পরিবর্তন’, টেকসই উন্নয়ন ও ডেনিম ওয়াশ এবং স্বচ্ছতা ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক ৩টি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় বক্তারা বলেন, বিশ্ববাজারে ভাল চাহিদা থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পে একটি শক্ত জায়গা করে নিয়েছে ডেনিম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় ডেনিম প্রোডাক্ট রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বে বছরে ডেনিমের বাজার প্রায় ৮ হাজার কোটি ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জোগান দেয়া হয় ৩৫০ কোটি ডলারের ডেনিম পণ্য। বিশ্বে বাংলাদেশের ডেনিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সে হারে উৎপাদন হচ্ছে না বলে এ খাতে রফতানি বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হলেও আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ খাত থেকে ৭০০ কোটি ডলারের রফতানি আয় সম্ভব। এই অফুরন্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোক্তারা কম সুদে ঋণ, গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।