কোরিয়ান মালিকানাধীন একটি গার্মেন্টপ্রতিষ্ঠান বিক্রির জন্য বেসরকারি পরামর্শকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, যা অবগত নয় ইপিজেডের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। অথচ চট্টগ্রাম ইপিজেডে অবস্থিত ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল (বিডি) লিমিটেড নামের এ প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার শ্রমিকের পাওনা রয়েছে ৩২ কোটি টাকা।
সেটি পরিশোধে দেড় বছর ধরে কারখানাটি বিক্রির চেষ্টা করছে বেপজা। ব্রিটিশ মালিকানাধীন একটি কম্পানির সঙ্গে যখন এ বিষয়ে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে তখনই গোপন তৎপরতা শুরু হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার এস আলম টাওয়ারে অবস্থিত করপোরেট সাপোর্ট (প্রা.) লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গত ৫ ডিসেম্বর পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির তিনটি গার্মেন্ট বিক্রি অথবা হস্তান্তরের জন্য ক্রেতা খুঁজে দেবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি। ইয়াং ইন্টারন্যাশনালের হয়ে অথরাইজেশন লেটারে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সাং ওক পার্ক।
চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সাইফুদ্দিন খালেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। হয়তো দ্রুতই চুক্তিতে পৌঁছতে পারব। আমাদের সঙ্গে চুক্তি থাকাকালে অন্য কারো সঙ্গে বিক্রির বিষয়টি তারা চূড়ান্ত করতে পারে না। ’
আলোচিত কারখানাটি বিক্রি বিষয়ে কথা বলতে বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অবগত নন বলে জানান।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম বলেন, ‘কোনো পরামর্শকের সঙ্গে ইয়াং ইন্টারন্যাশনালের চুক্তির বিষয় আমার জানা নেই। ’
বেপজা সূত্র জানায়, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর লে অফ ঘোষণা করে চট্টগ্রাম ইপিজেডের ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল (বিডি) লিমিটেড। ২৮ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের ৩২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ নিয়ে প্রচণ্ড চাপের মুখে আছে বেপজা ও ইয়াং ইন্টারন্যাশনাল। শুরুতে চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মিরাজ গ্রুপ কারখানাটি কেনার চেষ্টা করে। এ জন্য তারা বেপজা থেকে ছাড়পত্রও নেয়। অগ্রিম হিসেবে ইয়াং ইন্টারন্যাশনালকে ছয় কোটি টাকা প্রদান করে। কিন্তু শেষ দিকে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। সর্বশেষ বেপজার মাধ্যমে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান এফসিআই গ্রুপের সঙ্গে ইয়াং ইন্টারন্যাশনালের তিনটি প্রতিষ্ঠান বিক্রির বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে। ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পাঁচ মাস ধরেই আলোচনা চলছে। ইপিজেডের মালিক মূলত বেপজা। দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা প্লট আকারে বিন্যস্ত ইপিজেডের ভূমি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে লিজ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাই ইপিজেডের যেকোনো প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রিতে বেপজা থেকে অনুমতি নিতে হয়।
এদিকে মিরাজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর পরিচালক মাহবুব উদ্দিন জুয়েল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেপজা থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার পরই ইয়াং ইন্টারন্যাশনালের অসহযোগিতার কারণে আমরা কম্পানিটি কিনতে পারিনি। তারা ছাড়পত্র দিতে গড়িমসি শুরু করে। আমাদের কাছ থেকে অগ্রিম হিসেবে নেওয়া ছয় কোটি টাকাও এখনো পরিশোধ করেনি। আর পরামর্শকের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি জানা নেই। তারা বেপজাকে পাশ কাটিয়ে এটা করতে পারে না। আমাদের অনুমতি ছাড়াও তারা কোনো ধরনের চুক্তি করতে পারে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ’
চট্টগ্রাম ইপিজেডের ৫ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত সাতটি প্লট নিয়ে ইয়াং ইন্টারন্যাশনালের অবস্থান। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার ছিল ৩৩৪ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ সালে তা কমে ১৮৬ কোটি ৭২ লাখ টাকায় নেমে আসে। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নেমে আসে ১৫৪ কোটি টাকায়। মূলত সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর অ্যাকর্ডের ভবন নিরীক্ষায় এ কম্পানির একটি কারখানায় ত্রুটি পাওয়া পায়। এর পরই কারখানার কোরিয়ান মালিক ব্যবসা গুটিয়ে নেন।