বড় দিনের পোশাক রফতানি করে ভাল ব্যবসা করেছেন বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা। ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে সুখ্যাতি পাওয়া ব্র্যান্ডগুলোর বেশির ভাগ পোশাক এখন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। ওয়ালমার্ট, গ্যাপ, এইচএ্যান্ডএম, হেনস এ্যান্ড মরিজ এবি ও ইন্ডিটেক্সের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর শো-রুমে শোভা পায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত তৈরি পোশাক। চলতি অর্থবছরের গত পাঁচ মাসে নিটওয়্যার ও ওভেন মিলিয়ে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। এর মূল কারণ হিসাবে উদ্যোক্তারা বলছেন, বড় দিনের পোশাক রফতানি বৃদ্ধি পাওয়া। একই সঙ্গে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের মুখে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংটা অনেক মজবুত হয়েছে।
জানা গেছে, বড় দিন সামনে রেখে গত তিনমাস আগেই পোশাক কেনার বিদেশী অর্ডার বৃদ্ধি পায়। অর্ডারকৃত এসব পোশাক নবেম্বরের মাঝামাঝিতে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে যায়। এ কারণে গত দু’মাসে পোশাকের রফতানি অনেক বেড়েছে। বিদেশে বিক্রি করা এসব পোশাকের মধ্যে ছিল টিশার্ট, জিন্সপ্যান্ট, গ্যাবাডিন প্যান্ট, টপস, ফরমাল শার্ট, ক্যাজুয়াল শার্ট, জার্সি, আন্ডার গার্মেন্টস, গেঞ্জি, টাই এবং ডেনিম কাপড়ের বিভিন্ন নামের পোশাক। মেইড ইন বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংটা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়ায় ক্রেতাদের কাছেও এখন এদেশের তৈরি পোশাক ব্যবহার করা গৌরব ও সম্মানের বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী জনকণ্ঠকে বলেন, ব্র্যান্ডিংটা ইতিবাচক ভাবমূর্তির প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এ্যাকর্ড এবং এ্যালায়েন্সের তদারকির মুখে এদেশের গার্মেন্টস শিল্পে এখন বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্বসেরা গার্মেন্টসগুলো বাংলাদেশে রয়েছে। ফ্যাক্টরিগুলো শতভাগ কমপ্লায়েন্স হয়ে কাজ করছে। এর ফলে ব্র্যান্ডিংটা অনেক মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, বড়দিনে বাংলাদেশের পোশাক মানে বাড়তি কিছু পাওয়া। মেইড ইন বাংলাদেশ খ্যাত পোশাক এখন ইউরোপ-আমেরিকার অভিজাত শ্রেণীর লোকজন একে অপরকে উপহার হিসেবে দিচ্ছেন। এ কারণে এবার উদ্যোক্তারা ভাল অর্ডার পেয়েছেন।
জানা গেছে, ইউরোপ-আমেরিকার পোশাক ক্রেতাদের জোট এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে দেশের পোশাক কারখানার অগ্নিব্যবস্থাপনা, ভবনের কাঠামো ও বৈদ্যুতিক সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং শ্রম অধিকার নিশ্চিতে পোশাক খাতের ওপর এই দুই জোটের বরাবর চাপ ছিল। পোশাকের সঠিক দাম নির্ধারণের বিষয়টি নিয়েও ক্রেতাদেশগুলোর সঙ্গে উদ্যোক্তাদের দরকষাকষি চলছে।
এতসব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বড়দিন বাড়তি স্বস্তি এনে দিয়েছে এদেশের পোশাক খাতে। প্রচলিত মার্কেটের পাশাপাশি অপ্রচলিত মার্কেটেও তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ছে। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও এখন বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে যেভাবে রফতানি বাড়ছে এই অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হলে চীনকে টপকে প্রথম অবস্থানে চলে আসতে পারে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে রূপকল্প-২০২১ সাল সামনে রেখে সরকারের পক্ষ থেকে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এতে ৫০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পোশাক রফতানি বাড়াতে হলে অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে আরও সংস্কার ও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এজন্য তারা গ্যাস ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তার কথা বলছেন। এছাড়া বন্দরের ক্যাপাসিটি বাড়ানো, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেনে রূপান্তর, মংলা পোর্ট উন্নয়ন ও দ্রুত পায়রা বন্দর চালু করার প্রস্তাব রয়েছে উদ্যোক্তাদের। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বড়দিন সামনে রেখে পোশাক রফতানি বেড়েছে। এই উৎসব সামনে রেখে এবার এবং সাড়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ রফতানি প্রবৃদ্ধি হবে। ইতোমধ্যে তৈরিকৃত পোশাক রফতানি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বড়দিনের সিংহভাগ পোশাক ক্রেতারা বুঝে পেয়েছেন। এবার বেচাবিক্রিও ভাল হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, দেশের রফতানির মূল চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক পণ্য। গত পাঁচ মাসে নিটওয়্যার ও ওভেন মিলিয়ে তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ সময়ে ১ হাজার ১৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ১১৩ কোটি ডলারের হয়েছিল। পাঁচ মাসে পোশাক খাতের রফতানির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নিটওয়্যার খাতের তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ওভেন পণ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশেরও কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারের বাইরে অন্যান্য দেশে তৈরি পোশাক রফতনিতে ভাল করেছে বাংলাদেশ। নতুন বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি হয়েছে তুরস্ক, জাপান ও অষ্ট্রেলিয়ায়।