এগিয়ে চলছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। বর্তমানে রফতানি আয়ের প্রায় সবটুকুই আসে এই একটি খাত থেকে। সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগও হয়েছে এ খাতেই। তবে শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, জ্বালানি আর অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে সম্ভাবনার সবটুকু কাজে লাগাতে পারেনি তারা। বাজারে টিকে থাকতে ‘প্রতিযোগিতামূলক সময়ে’ পণ্য সরবরাহকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের যাত্রা শুরু কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসেবে। পরবর্তীতে কৃষির ওপর ভর করে শুরু হয় শিল্পের যাত্রা। সে যাত্রায় সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে এ দেশের গৌরবের পণ্য পাট-চামড়া জায়গা হারালেও শক্ত হতে থাকে তৈরি পোশাক শিল্পের অবস্থান।
১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে দেশের মোট রফতানি আয়ের মাত্র তিন দশমিক আট নয় ভাগ যোগান দেয়া পোশাক খাত বর্তমানে রফতানি আয়ের চালিকা শক্তি। গত অর্থবছরে মোট রফতানি আয়ের ৮১ দশমিক দুই তিন শতাংশ যোগ হয়েছে এই একটি খাত থেকে।
তিন দশক আগের ৩৮৪টি পোশাক কারখানা এখন দাঁড়িয়েছে ৪৪৮২টিতে, এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪৪ লাখ নারী-পুরুষের।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সঠিক পথেই এগিয়েছে পোশাক খাত, যদিও প্রত্যাশা-প্রাপ্তির ফারাক কিছুটা থেকেই গেছে দীর্ঘ এই পথচলায়, এমনটাই মনে করেন এ খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা যে জায়গা এসেছি এটা যথেষ্ট বলতে হবে; তারপরও আমাদের যে জায়গায় আসা উচিত ছিল সে জায়গায় আমরা আসতে পারিনি, এর কারণ হলো অবকাঠামোগত দুর্বলতা।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, লক্ষ্য অনেক দূর, পূরণ করতে হবে ২০২১ সাল নাগাদ ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা।
অসম্ভব দেখছে না গত অর্থবছর বড় ধরনের হোঁচট খাওয়া এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। তবে, সেজন্য দরকার মানসম্পন্ন গ্যাস-বিদ্যুত, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন আর বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে অনলাইন ব্যবসায় বেশ ভালভাবে এগিয়ে চলছে; আর এই ব্যবসায় করতে হলে আমাদের খুব দ্রুতই ডেলিভারি দিতে হবে। আর সেই দ্রুত মাল ডেলিভারি করার সক্ষমতা আমাদের নেই।
এফবিসিআইর সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এখনও সেটা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত নয়। বিজিএমইএ সহসভাপতি এস এম মান্নান বলেন, এই খাতে আরেক সমস্যা হলো বন্দর। যেখানে আমাদের মাল আমদানি ও রফতানি করতে গেলে অনেক সময় নষ্ট হয়। আমাদের চিটাগাং পোর্ট ও মংলা পোর্টের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে।
এ খাতের উন্নয়নে কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোসহ নীতি-সহায়তা বাড়ানোর কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে, প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে পরিপক্ব বিবেচনায় এ শিল্পকে কিছুটা বঞ্চিত করার সময় এসেছে বলেও মনে করেন তারা। অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, পোশাক খাতে এখনও নীতি-সহায়তা দেয়া হয়। সেটার সন্দেহ নেই। তবে রফতানি খাতে নগদ প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে নজর দিতে হবে; এখানে কীভাবে পরিবর্তন আনা যায়।
আগামীদিনের পথ পরিক্রমায়, যেখানে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে পোশাক শিল্পে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর, সেখানে সরকার ও উদ্যোক্তা সব পর্যায়েই যেন গুরুত্ব দেয়া হয় দক্ষ জনবল তৈরিতে, সেই আহ্বান অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।