দেশের বিভিন্ন তৈরী পোশাক শিল্প-কারখানাকে পরিবেশবান্ধব করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদেশী ঋণসহায়তা নিয়ে গ্রহণ করে তা আবার ঋণ হিসাবে ওইসব কারখানাকে দেয়া হবে। দেশীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে তা কারখানাগুলোকে ৭ শতাংশ সুদে দেয়া হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সরকার দেশের তৈরী পোশাক খাতের কারখানাগুলোর পরিবেশকে উন্নত ও নিরাপদ করতে ১০৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হাতে নিতে যাচ্ছে। এখানে বিদেশী কারিগরি ও ঋণসহায়তা নিচ্ছে ৯৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ইইউ, কেএফডব্লিউ এবং জিআইজেড থেকে এক কোটি ৩৩ লাখ ইউরো কারিগরি সহায়তা হিসাবে পাবে। তবে জিআইজেড প্রদেয় ৩০ লাখ ইউরো তারা নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ব্যয় করবে। তাই এটাকে এডিপি অংশে প্রতিফলিত হয়নি। এই প্রকল্পের জন্য এএফডি ৫ কোটি ইউরো ঋণ দেবে। ওই অর্থ নন-এডিপি কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্বাচিত অংশীদারিত্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (পিএফআই) মাধ্যমে বাছাইকৃত কারখানাকে স্বল্পসুদে ঋণ দেবে। এএফডির দেয়া পাঁচ কোটি ইউরো ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে ০.৭৫ শতাংশ হারে সুদ দিয়ে সাত বছর গ্রেসপিরিয়ডসহ ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তবে এখনো চুক্তি হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, পিএফআইগুলো আরএমজির কারখানাগুলোকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সাড়ে ৩ শতাংশ হারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ পাবে। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ০.৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ নেবে। তৈরী পোশাক খাতের বিকাশের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রচলিত সার্ভিস চার্জ অপেক্ষা ০.২৫ শতাংশ কম নেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের টাকা বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংককে দেবে। আর এই ব্যাংকগুলো মিডিয়া হিসেবে বিভিন্ন তৈরী পোশাক শিল্পকে দেবে।
উল্লেখ্য, রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পর এই খাতের পরিবেশ উন্নত করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলওর সহযোগিতায় একটি জরিপ করা হয়। এক হাজার ৫৪৯টি তৈরী পোশাক কারখানার অ্যাসেসমেন্ট ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এদের রিমিডিয়েশনের কাজে গতি আনার জন্য কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, বুয়েট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, গণপূর্তের সমন্বয়ে একটি কোর বডি গঠন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবনের অগ্নিনির্বাপক, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য এই ঋণ পাবে। আর যেসব কারখানা বা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মপরিবেশ সফলভাবে উন্নত করতে পারবে তারা নন-এডিপি ঋণ থেকে নেয়া ঋণের ১০ শতাংশ প্রকল্প থেকে অনুদান হিসেবে পাবে। তবে কনসালট্যান্সি ফার্মগুলোর সার্টিফিকেটের ওপর ভিত্তি করে ফ্যাক্টরিগুলোকে পিএফআই থেকে ঋণ দেয়ার ওপর ১০ শতাংশ অনুদান দেয়াটা ঠিক হবে না। এতে ফার্মগুলো রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষে পরিণত হবেÑ এটা কাম্য নয়। এখানে পরিবেশ অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরকে এই প্রত্যয়নপত্র দেয়ার জন্য রাখা উচিত।