বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পরবর্তী মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা আদায়ের বিষয়ে সর্বোচ্চ দরকষাকষি করবে। পাশাপাশি আগের সম্মেলনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেবা খাতে সার্ভিস ওয়েভার সুবিধা কার্যকর, কৃষি ও মৎস্য খাতে অভ্যন্তরীণ ভর্তুকি প্রদানে নীতিমালার বিষয়েও বাংলাদেশ জোরালো অবস্থান নেবে। এছাড়া রুলস অব অরিজিন, স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেন্সিয়াল ট্রিটমেন্ট সুবিধা বাস্তবায়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখে ই-কমার্স সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ডব্লিউটিওর প্রতিশ্রুত এলডিসির দেশগুলোর জন্য সব সুবিধা কার্যকর করার বিষয়েও জোর দাবি জানাবে।
সোমবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের আগামী (একাদশতম) সম্মেলনে বাংলাদেশের যোগদান ও অবস্থান বিষয়ে সচিবালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
এতে জানানো হয়, দুই বছর পর আবারও ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের এ সম্মেলন বসতে যাচ্ছে। ১০-১৩ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে যোগ দিতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ২৫ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ৯ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ডব্লিউটিওর সম্মেলনে বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব দাবিই জোরালোভাবে তুলে ধরবে। তবে এবারের সম্মেলন থেকে বাংলাদেশসহ অন্য এলডিসিরা কতটা সুফল পাবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তিনি এর কারণ উল্লেখ করে বলেন, ডব্লিউটিও এখন আগের মতো কার্যকর অবস্থায় নেই। অনেক দেশ ডব্লিউটিওর বিকল্প প্লাটফর্ম গড়ে তুলছে। তারা আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। ফলে অনেক দেশের অবস্থান ডব্লিউটিওর বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ডব্লিউটিওর সদস্য হিসেবে সংস্থাটির প্রদেয় সব ধরনের সুবিধা ভোগ করছি। এ সংস্থার কাছ থেকে আমাদের প্রাপ্তি অনেক। তবে বিশ্বের প্রায় সব দেশ আমাদের ডব্লিউটিওর বিধান অনুযায়ী শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিলেও একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এ সুবিধা দেয় না। যেটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ও ডব্লিউটিওর নীতিবিবর্জিত। আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিওর সম্মেলনে আমরা এ ইস্যুতে জোরালো ফাইট করব।
এক প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করলে এবং এর গ্রেস পিরিয়ড সুবিধাসহ ২০২৪ সাল পার হলে আমরা আর ডব্লিউটিও থেকে এলডিসির সুবিধা পাব না। তখন আমাদেরও অন্যান্য উন্নয়নশীলদের মতো বিকল্প চিন্তা করতে হবে। এর জন্য আমরা নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তখন ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশে আমরা জিএসপি সুবিধার পরিবর্তে জিএসপি প্লাস সুবিধায় প্রবেশ করব। এছাড়া বাংলাদেশও তখন আঞ্চলিক, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ওপর গুরুত্ব দেবে। যার প্রস্তুতি আমরা শুরু করেছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সেই সক্ষমতায় বাংলাদেশ অনেকটাই পৌঁছে যাবে।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়েও কথা বলেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, সারা বিশ্ব যখন বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে প্রশংসা করছে, সর্বশেষ পোপ ফ্রান্সিসও বাংলাদেশে এসে প্রশংসা করেছেন। তখন একটি দল তার কুৎসা রটাচ্ছে। বিএনপির মির্জা আব্বাস বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের লোকও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না। এর জবাবে তোফাযেল আহমেদ প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে তোমরা কেন নির্বাচনে আসছ না। তোমরা তো জান, আওয়ামী লীগের লোকরাও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না। এসব মায়াকান্না করে কোনো লাভ নেই। নির্বাচন হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানেই নির্বাচন হবে।