পোশাক খাতের সংস্কারবিষয়ক ইউরোপের ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কারখানায় শ্রমিকদের বিশৃঙ্খলায় উস্কানির অভিযোগ এনেছে চট্টগ্রামের সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাদের অভিযোগ, গ্রুপের অন্য একটি কারখানা রিলায়েন্স ডেনিম বন্ধ ঘোষণা করা হয় গত মাসে। শ্রম আইন অনুযায়ী সব শ্রমিকের পাওনা পরিশোধও করা হয়। কয়েকজন শ্রমিককে গ্রুপের অন্য কারখানা সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সে কাজ দিতে জোর খাটাচ্ছেন অ্যাকর্ডের কর্মকর্তারা। এতে রাজি না হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। ফলে কয়েকজন ক্রেতা রফতানি আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এতে বড় আর্থিক ক্ষতি এবং ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে তাদের।
গত সপ্তাহে শ্রম মন্ত্রণালয়ের শ্রম পরিদপ্তর, বিজিএমইএ এবং শিল্প পুলিশপ্রধানের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে নালিশ করেছে সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বিজিএমইএ নেতারা অ্যাকর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সমঝোতামূলক একটা সমাধানে আসার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইফতেখার খালিদ সমকালকে বলেন, বিভিন্ন কারণে গত মাসে তাদের মালিকানাধীন রিলায়েন্স ডেনিম লে অফ ঘোষণা করতে বাধ্য হন। শ্রম আইন অনুযায়ী সব শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করে দিয়েছেন। কয়েক জন শ্রমিককে তাদের অন্য কারখানা সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে ২৫ জন শ্রমিককে এভাবে কাজে দিতে হবে বলে এক রকম জোর খাটান অ্যাকর্ডের কর্মকর্তারা। তাদের চাপে কাজ দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন তারা। তবে কারখানার অন্য শ্রমিকরা অ্যাকর্ডের সুপারিশ করা এ ২৫ জনের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়নি। কিন্তু তাদের নিয়োগ না দিলে ক্রেতাদের কাছে অভিযোগ করে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন অ্যাকর্ডের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে অ্যাকর্ড কর্মকর্তা এবং ওই ২৫ শ্রমিকের মধ্যে কারখানার ভেতরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে পুলিশকে অনুরোধ করে বিবদমান সব পক্ষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন তারা। ইফতেখার খালিদ বলেন, এর কয়েক দিন পর সত্যি সত্যি কয়েকজন ক্রেতার কাছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাঠিয়ে দিয়েছে অ্যাকর্ড। দুই ক্রেতা রফতানি আদেশ বাতিল করেছেন। অন্য কয়েক ক্রেতা তাদের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে অ্যাকর্ডের বক্তব্য জানতে সমকালের পক্ষ থেকে পাঠানো ই-মেইলের জবাব দিয়েছেন জোটের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ। তিনি জানান, ‘সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স কারখানা ব্যবস্থাপনা এবং মালিক পক্ষের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছেন তারা। পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য (ওএসএইচ) বিষয়ে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আসে অ্যাকর্ডের কাছে। অ্যাকর্ডের সিগনেটরি ইউনিয়ন ফেডারেশন (বিআইজিইউএফ), সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্স কারখানার কিছু শ্রমিক, অ্যাকর্ডভুক্ত ব্র্যান্ড এবং ইউনিয়ন মিলে জোটের এ সংক্রান্ত কৌশলের আওতায় এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বড় শ্রমিক সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের এক শীর্ষ নেতা সমকালকে বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী বিশৃঙ্খল কর্মীদের পাওনা পরিশোধ করার পর এ নিয়ে অ্যাকর্ডের বাড়াবাড়ি তারাও সমর্থন করছেন না। এ মুহূর্তে কোনো অবস্থাতেই পোশাক শিল্পের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হোক এটা চান না তারা।