সারা দেশের ২১ জেলায় পাটশিল্প পল্লি গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। মূলত পাটের ব্যাগ, জুতা, স্যান্ডেল, তৈজসপত্রসহ বৈচিত্র্যময় পাটজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে এসব পাটশিল্প পল্লি স্থাপন করা হবে। এসব পণ্য রপ্তানিও করা যাবে। দেশের যেসব জেলায় বছরে দুই লাখ বেলের বেশি পাট উৎপাদন হয় এবং যেসব জেলায় অন্তত ১০ জনের বেশি পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তা আছে, সেসব জেলাকেই পাটশিল্প পল্লির জন্য প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। এসব পাটপল্লির জন্য চালু ও বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলের খালি জায়গা ব্যবহার করা হতে পারে।
গত মে মাসে পাটশিল্পের দ্রুত বিকাশ এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পাটশিল্প পল্লি গড়ে তোলার জন্য পাট উৎপাদনভিত্তিক এলাকা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়। সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নেতৃত্ব দেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রেজাউল কাদের। সম্প্রতি এই কমিটি পাটশিল্প পল্লি গঠনের জন্য কোন কোন এলাকা নির্বাচন করা যেতে পারে, সেই সুপারিশ করেছে। প্রাথমিকভাবে এমন ২১ জেলায় পাটশিল্প পল্লি তৈরি করার সুপারিশ করেছে ওই কমিটি।
কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরে দুই লাখ বেলের বেশি পাট উৎপাদন হয়, এমন ১৬টি জেলা আছে। জেলাগুলো হলো ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, জামালপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, যশোর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ। এসব এলাকা পাটশিল্প পল্লি তৈরির জন্য উপযোগী। সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদন হয় ফরিদপুর জেলায়। গত অর্থবছরে ৯ লাখ ৬৩ হাজার বেল পাট উৎপাদন হয়েছে জেলাটিতে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে রাজবাড়ী ও মাগুরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি ২৬৬ জন পাটপণ্যের উদ্যোক্তা আছে। ঢাকাসহ এমন আটটি জেলা আছে। অন্য জেলাগুলো হলো চট্টগ্রাম, রংপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, খুলনা, জামালপুর ও নারায়ণগঞ্জ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি আমাদের হাতে আসার পর তা পর্যালোচনা করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপাতত ২১ জেলায় পাটপল্লি গড়ে তোলা যাবে না। তবে ফরিদপুর, জামালপুর, মাদারীপুর জেলার মতো যেখানে বেশি পাট উৎপাদন হয়, সেখানে পাটপল্লি স্থাপন করা যাবে। বেশি পাট উৎপাদন হওয়া জেলায় বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবেন। আমাদের লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। তাঁরা সেখানে পাটের ব্যাগ ও স্যান্ডেলের মতো পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য খুবই সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত। কেননা, সনাতনী পাটপণ্যের রপ্তানিবাজার অত্যন্ত সীমিত।’
মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, শুধু পাটকলের অব্যবহৃত জায়গায় এ ধরনের পল্লি তৈরি করা যাবে না। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ কিংবা খাসজমি ব্যবহার করতে হবে।
বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের আওতায় যেসব পাটকল ছিল, সেখানে ১০০ একরের মতো জমি আছে। সেখানে অন্তত ২৫টি ছোট শিল্প প্লট করা যাবে। এ ছাড়া বিজেএমসির আওতায় ২৫টি পাটকল পরিচালিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, দেশের ৫৪টি পাটকল বিভিন্ন সময়ে বন্ধ হয়েছে। এসব বন্ধ পাটকলের জায়গায় পাটশিল্প পল্লি তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে কমিটির প্রতিবেদনে। বিভিন্ন সময় বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া ৩৪টি পাটকলের মধ্যে যেগুলো চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে, সেগুলো সরকারের আওতায় এনে সেখানে পাটপল্লি গড়ে তোলার সুপারিশও করা হয়েছে।
বাংলাদেশ হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাট উৎপাদনকারী দেশ। ভারত শীর্ষ পাট উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৭৫ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের ক্রেতা সরকারি-বেসরকারি পাটকল। এসব পাট দিয়ে মূলত সুতা, পাটের বস্তা, ব্যাগসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা হয়। এ ছাড়া বছরে গড়ে ১০-১২ লাখ বেল পাট রপ্তানি হয়। পাট ও পাটজাত পণ্য হলো দেশের তৃতীয় বৃহৎ রপ্তানি খাত। গত অর্থবছরে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই খাতে প্রায় ২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন।