বাংলাদেশের সিনথেটিক সুতা রপ্তানিতে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে তুরস্ক। হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় এ উদ্যোগ নিয়েছে তুরস্কের সরকার। ২৯ ডিসেম্বর থেকে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে দেশটি।
বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, তুরস্কে যে পরিমাণ সিনথেটিক সুতা রপ্তানি হচ্ছে তার একটা অংশ করছে চীনা রপ্তানিকারকেরা। তুরস্ক ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। এরপর চীনারা বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে সুতা রপ্তানি শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্ক এরই মধ্যে মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ওপর একই শুল্ক আরোপ করেছে।
দেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সর্বশেষ চীনারা বাংলাদেশ ও নেপালকে ব্যবহার করে তুরস্কে রপ্তানি শুরু করে। এখন তুরস্ক বাংলাদেশ ও নেপালের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তাঁদের দাবি, বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপ হলে দেশের আসল রপ্তানিকারকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দেশের পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান সিনথেটিক সুতা রপ্তানি করছে।
কোনো দেশে তার অভ্যন্তরীণ বাজারের চেয়ে কম দরে অথবা উৎপাদন খরচের কম মূল্যে পণ্য রপ্তানি করলে আমদানিকারক দেশ তদন্ত সাপেক্ষে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করতে পারে। এ শুল্ক আরোপের পর অন্য দেশ থেকে হঠাৎ আমদানি বেড়ে গেলে আমদানিকারক দেশ রপ্তানিকারক দেশের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে একে বলা হয় ‘সারকামভেনশন’। তুরস্কের অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে এভাবে রপ্তানির বিষয়টি ইতিমধ্যে পর্যালোচনা করেছে।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) এ-বিষয়ক একটি সভার কার্যপত্রে এ বিষয়ে তুরস্কের মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে তুরস্কে ১ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন সিনথেটিক সুতা রপ্তানি হয়। ২০১৬ সালে এর পরিমাণ বেড়ে যায় ৮৬ শতাংশ, মোট সিনথেটিক সুতা রপ্তানি দাঁড়ায় ২ হাজার ১২০ টন। ২০১৭ সালের প্রথম ১০ মাসে তুরস্কে এ সুতা রপ্তানি দাঁড়ায় ৩ হাজার টনে। অন্যদিকে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালে সিনথেটিক সুতার প্রতি কেজির রপ্তানিমূল্য ৩ দশমিক ৪৭ মার্কিন ডলার থেকে কমে ২ দশমিক ৮৫ ডলারে নেমে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের বড় সিনথেটিক সুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ওয়েল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, চীনারা বিভিন্ন দেশকে ব্যবহার শেষে বাংলাদেশে এসেছে। এখন যদি তুরস্ক বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপ করে, তাহলে দেশের মিলগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, ‘চীন থেকে সুতা এনে সেটা ভুয়া সনদ ব্যবহার করে তুরস্কে যাচ্ছে। আমরা বিষয়টি আগে থেকেই বলে আসছি।’
এদিকে তুরস্ক তদন্তের বিষয়ে বাংলাদেশকে জানানোর পর দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন বলে জানায় ট্যারিফ কমিশন।
কমিশনের সভার কার্যপত্রে বলা হয়, তুরস্ক মনে করছে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে রপ্তানিকৃত সিনথেটিক সুতা এ দুই দেশে উৎপাদিত নয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানান। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ তদন্তের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে তুরস্ক একতরফাভাবে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করতে পারে। এ বিষয়ে তিনি আইনজীবী নিয়োগেরও পরামর্শ দেন।
তুরস্ক বলছে, নির্দেশনা জারির ৩৭ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের সব উৎপাদনকারীকে প্রশ্নমালা পূরণ করে পাঠাতে হবে। এ প্রশ্নমালা পূরণ করতে হবে তুর্কি ভাষায় এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্রও দিতে হবে একই ভাষায়।
তুরস্কে বাংলাদেশ বছরে ২১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। বিপরীতে আমদানি করে ৬৩ কোটি ডলারের পণ্য। দেশটি বাংলাদেশের পোশাকের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আদায় করছে।
বাংলাদেশ আমদানি করা কোনো পণ্যের ওপর এখন পর্যন্ত অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করতে পারেনি। তবে বাংলাদেশের পাটপণ্য ভারতে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ভারত ও পাকিস্তানে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্কের মুখে পড়েছে। ভারত এখন বাংলাদেশি মাছ ধরার জালে এ শুল্ক আরোপের তদন্ত করছে।