গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের লক্ষ্যে সরকার সব ধরণের প্রস্তুতি নিলেও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ঠিক করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। শুরুতে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদকে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে প্রস্তাব করা হলেও বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠন আপত্তি দেওয়ায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে আটকে আছে মজুরি বোর্ড গঠনের ঘোষণা। জটিলতা নিরসনে আজ মঙ্গলবার শ্রম মন্ত্রণালয় গার্মেন্টস খাতসংশ্লিষ্ট ৪০ এর বেশি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে। অবশ্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এ খাতের মজুরি বোর্ড গঠন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শুক্কুর মাহমুদের নামের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের যাওয়ার পর শুরুতেই ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি) আপত্তি জানিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। ১৬ গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের জোট আইবিসি ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়নের সদস্য। একইভাবে আপত্তি জানিয়েছে প্রায় ৫০টি শ্রমিক ফেডারেশনের সমন্বয়ে গঠিত গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ।
এছাড়া বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদও শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাবিত প্রনিনিধি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। গত রবিবার ইস্যুটি নিয়ে বৈঠকে বসেন আইবিসি’র নেতারা। বৈঠকে তারা আইবিসি’র সদস্য ও গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক লীগের সভাপতি জেড এম কামরুল আনামের নাম শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে চূড়ান্ত করেন। এ প্রস্তাব ইতিমধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অবশ্য কামরুল আনামকে অন্য শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা মানবেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আইবিসি’র মহাসচিব তৌহিদুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, আমরা কামরুল আনামের নাম প্রস্তাব করলেও মাঠে তো একমাত্র আইবিসি’ই নয়, অন্যরাও রয়েছে। তবে শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনায় আলোচনার ভিত্তিতে তাকে বিবেচনা করা যায়। জানা গেছে, মজুরি বোর্ডের জন্য শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় শ্রমিক লীগের নেত্রী শামসুন্নাহার ভুঁইয়ার নামও আছে আলোচনায়। তিনি এর আগে ২০১০ সালের মজুরি বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ছিলেন।
এদিকে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধির নাম চূড়ান্ত করতে না পারায় আটকে আছে মজুরি বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া। তবে আজকের বৈঠকের পর এ বিষয়ে সমাধান আসতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শ্রমিক নেতা ও আইবিসি’র সাবেক মহাসচিব আমিরুল হক আমিন ইত্তেফাককে বলেন, মজুরি বোর্ডে গ্রহণযোগ্য শ্রমিক প্রতিনিধি না থাকলে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হবেনা। এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য হবেনা।
এদিকে গার্মেন্টস মালিকপক্ষ ইতিমধ্যে তাদের নামের প্রস্তাবও মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এছাড়া মালিক ও শ্রমিক পক্ষের দুইজন স্থায়ী প্রতিনিধি, সরকারপক্ষের প্রতিনিধি ছাড়াও নিরপেক্ষ প্রতিনিধি রয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের জুনে গঠিত মজুরি বোর্ড ওই বছরের ডিসেম্বরে গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের জন্য ৫ হাজার ৩শ’ টাকা সর্বনিম্ন মজুরি ঘোষণা করে। ওই বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি। দেশে এ খাতের শ্রমিকদের জন্য ১৯৮৪ সালে প্রথম মজুরি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় শ্রমিকদের ন্যুনতম মোট মজুরি ছিল ৬৩০ টাকা। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে ৯৩০ টাকা, ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৬২ টাকা, ২০১০ সালে ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, বিশ্বে এখনো বাংলাদেশেই শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে কম।