দেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপের ২৮টি দেশে সম্মিলিতভাবে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) হিসাবে, আলোচ্য সময়ে গত তিনবছর ধরে ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে এ রপ্তানি। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) এ দেশগুলোতে ২০০১ সাল থেকে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। আর ২০১১ সালে এসে এ সুবিধার শর্ত আরো শিথিল হয়। বাংলাদেশের প্রতিযোগী অন্যদেশগুলো এ সুবিধা পায়না। বাড়তি এ সুবিধার কারনে নিজস্ব কাঁচামাল না থাকা সত্বেও সেখানে রপ্তানি বাড়ছে বাংলাদেশের।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশের পণ্য রপ্তানিতে ইউরোপের বাজারে ১০ শতাংশের বেশি শুল্ক-কর পরিশোধ করতে হয়। এই হিসেবে যে সুবিধাজনক অবস্থানে বাংলাদেশ রয়েছে, তার পুরোটা ব্যবহার করতে পারছে না। কেননা শুল্ক পরিশোধ করেই অন্যতম প্রতিযোগী ভিয়েতনমামের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চাইতে বেশি। গার্মেন্টস রপ্তানিকারকদের মতামতও প্রায় একই। তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করার উপরই গুরুত্ব বেশি তাদের। তবে বিজিএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ নাছির মনে করেন, বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধ করা গেলে রপ্তানি আরো বাড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশই আসে গার্মেন্টস খাত থেকে। আর গার্মেন্টসের ৬০ শতাংশ যায় ইউরোপের বাজারে। তবে গত ছয় মাসের হিসাবে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেখানে গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি রয়েছে। তবে গত তিন বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রপ্তানি বেড়েছিল ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। এর আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে সাত শতাংশের কাছাকাছি।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে জানা গেছে, গত ছয় মাসে ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯৫৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৩ কোটি ডলার। অর্থাত্ বেড়েছে ৯৫ কোটি ডলার।
আলোচ্য সময়ে নিটওয়্যর রপ্তানি হয়েছে ৫৬১ কোটি ডলার আর ওভেন ৪০২ কোটি ডলার। ইইউর মধ্যে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার জার্মানি। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ২৬৭ কোটি ডলারের পোশাক। যদিও ইউরোপের রপ্তানির গড় প্রবৃদ্ধির তুলনায় দেশটিতে রপ্তানি গড় প্রবৃদ্ধি অনেক কম। মাত্র ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রধান বাজার যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে ১৮৫ কোটি ডলার। আগের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২১ শতাংশ। স্পেনে বেড়েছে, ২৬ শতাংশ, লিথুনিয়ায়, গ্রিসে ১০৩ শতাংশ। তবে একই সময়ে রপ্তানি কমেছে অস্ট্রিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশে।