পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনা শেষ করেছে এ সংক্রান্ত বোর্ড। বোর্ডের চূড়ান্ত সুপারিশের খসড়া অনুযায়ী, এ খাতের শ্রমিকদের নিম্নতম মাসিক মজুরি হচ্ছে ৫ হাজার ৭১০ টাকা। বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের নির্ধারিত এ মজুরি বিদ্যমান মজুরির চেয়ে ৭৩ শতাংশ বেশি।
খাতসংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, রফতানিমুখী বস্ত্র খাতে কর্মরত আছেন প্রায় ৬ লাখ শ্রমিক। এছাড়াও জামদানি, তাঁত, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিল, টেরিটাওয়েল, হোম টেক্সটাইল মিলগুলোও এ খাতের মধ্যে পড়ে। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা ছোট-বড় এ ধরনের সব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক মিলে এ খাতে কর্মরতের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ।
দেশের কটন টেক্সটাইল বা বস্ত্র শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি সর্বশেষ পর্যালোচনা করা হয় ২০১১ সালে। ওই বছর নির্ধারিত সর্বনিম্ন মাসিক মূল মজুরি ছিল ২ হাজার ১৫০ টাকা। এর সঙ্গে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াত ভাতা ছিল যথাক্রমে ৭৫২ টাকা ৫০ পয়সা, ৩০০ ও ১০০ টাকা। সব মিলিয়ে নিম্নতম মোট মজুরি নির্ধারণ হয় ৩ হাজার ৩০২ টাকা ৫০ পয়সা। নতুন কাঠামোয় তা বাড়িয়ে ৫ হাজার ৭১০ টাকার চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে বোর্ড। ৫ হাজার ৭১০ টাকা মজুরির আওতায় পড়বেন দেশের উপজেলা ও অন্যান্য এলাকায় স্থাপিত বস্ত্র খাতের শ্রমিকরা। জেলা শহরের বস্ত্র কারখানার শ্রমিকদের মাসিক মোট মজুরি হবে ৫ হাজার ৯৯০ টাকা। আর বিভাগীয় শহরের বস্ত্র খাতের শ্রমিকরা পাবেন মাসিক ৭ হাজার ১৭০ টাকা মজুরি। আগামী মাসের মধ্যভাগে নতুন কাঠামোর সুপারিশ চূড়ান্ত হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
জানতে চাইলে বস্ত্র খাতের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের শ্রমিক প্রতিনিধি ঢাকা কটন টেক্সটাইল মিলস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহসভাপতি মো. মোস্তফা বণিক বার্তাকে বলেন, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নতুন মজুরি কাঠামো সুপারিশ করা হয়েছে। এ নিয়ে মতপার্থক্যের কোনো সুযোগ নেই।
২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল গঠিত বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক পরিচালক ও জামাল উদ্দিন টেক্সটাইল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জামাল উদ্দিনের নাম। যোগাযোগ করা হলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কটন টেক্সটাইল শিল্পের আওতায় রয়েছে বিটিএমএর সদস্য স্পিনিং, উইভিং ও ডায়িং মিলগুলো। সারা দেশে নিয়োজিত ছোট ও বড় বস্ত্র মিলের শ্রমিকরাও রয়েছেন এর আওতায়। বিটিএমএর সদস্যের বাইরে এ শিল্পে ন্যূনতম ৭ হাজার কারখানা আছে। আর সারা দেশে হিসাব করলে এ খাতে শ্রমিক সংখ্যা ন্যূনতম ৫০ লাখ। সব শ্রমিকের জন্য নতুন কাঠামোর সুপারিশ করেছি আমরা। আলোচনাসাপেক্ষেই চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে।
জানা যায়, বোর্ড গঠনের পর মজুরি পর্যালোচনায় একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ডের পক্ষ থেকে নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত আবেদ টেক্সটাইল অ্যান্ড প্রসেসিং মিলস লিমিটেড, মমিন স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও জামাল উদ্দিন টেক্সটাইল প্রাইভেট লিমিটেড সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মজুরি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের মজুরি প্রস্তাবসহ শ্রমিকদের জীবনযাপন ব্যয়, জীবনযাপনের মান, উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য, মূল্যস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুঁকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ্যসহ শিল্পসংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থাও পর্যালোচনা করেন বোর্ড সদস্যরা।