Home Bangla Recent বিজিএমইএ নির্বাচন নিয়ে নতুন সংকট

বিজিএমইএ নির্বাচন নিয়ে নতুন সংকট

bgmea bhaban

পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচন নিয়ে এখন চলছে ত্রিমুখী সংকট। সমঝোতার মাধ্যমে নতুন কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও সাবেক সভাপতিদের মনোনীত ওই প্রার্থীর পক্ষে নেই কেউ কেউ। মনোনীত ওই প্রার্থীর দক্ষতা এবং ভাবমূর্তি ঘাটতির অভিযোগ তুলে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে অনেকেই। এই সুযোগে মাঠে নেমেছে তৃতীয় পক্ষ। এর ফলে পোশাক খাতের এ নির্বাচন নিয়ে ত্রিমুখী জটিলতা তৈরি হয়েছে।

বিজিএমইএর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর। তবে আদালতের নির্দেশে বিজিএমইএর ভবন ভেঙে ফেলা ও উত্তরায় নতুন ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানো হয়। সেই হিসাবে আগামী মার্চে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এদিকে সম্প্রতি ২০১৭-১৮ মেয়াদে বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তফসিলও ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ মার্চ ভোট হওয়ার কথা থাকলেও নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে মতানৈক্যে।

বিজিএমইএ সাবেক ও বর্তমান নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর আশীর্বাদে রুপা গার্মেন্টসের মালিক শহিদুল ইসলামের আগামী পর্ষদের সভাপতি হওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু বিজিএমইএর মতো এত বড় সংগঠন পরিচালনা এবং বর্তমান নতুন ভবন তৈরি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ভাবমূর্তি রক্ষায় কতটুকু সফলতার সঙ্গে শহিদুল কাজ করতে পারবেন এই নিয়ে প্রশ্ন আসে। ফলে বিজিএমইএর নির্বাচনে মূল ধারার দুটি প্যানেল সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম উভয়ই প্যানেলে শহিদুলের বিকল্প ভাবতে থাকে। উভয় পক্ষই প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হকের ব্যাপারে একমত হলেও সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় রুবানা হকও পিছিয়ে পড়েন। তিনি নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই থাকতে চান বলে জানান তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। অন্যদিকে ফোরাম থেকে সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরীর (পারভেজ) নাম আলোচনায় চলে আসে। তবে এখানেও রাজনৈতিক পরিচয় জটিলতার ফলে তিনি সরে পড়েন। এই অবস্থায় মাঠে নামে ‘স্বাধীনতা পরিষদ বিজিএমইএ’ নামে নতুন একটি পক্ষ। এই পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘ডিজাইন অ্যান্ড সোর্স’ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ৯ জন সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করে। তাঁরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের লড়াইয়ে থাকছেন বলে ঘোষণা দেন সংবাদ সম্মেলনে।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে পরিচালনা পরিষদ গঠন করতে চান উদ্যোক্তাদের একটি অংশ। এ জন্য ‘স্বাধীনতা পরিষদ বিজিএমইএ’ নামে নতুন এই পরিষদ গঠন করেছেন তাঁরা। তিনি আরো বলেন, সমঝোতার কমিটি গত দুই বছরে আমাদের কিছুই দিতে পারেনি। ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রায় দুই হাজার কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। গত চার বছরে পোশাক কারখানার সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর নির্বাচন না হলে বিজিএমইএ সাধারণ সদস্যদের মধ্যে নেতাদের কোনো জবাবদিহিও থাকে না।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, আমার বিষয়ে আবারও বিজিএমইএর সভাপতি হওয়ার যে কথা উঠেছে তা একেবারেই গুজব। এ ছাড়া ফোরাম থেকে শহিদুল ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে। আর এটাই চূড়ান্ত। শহিদুলের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন এসেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শহিদুল দীর্ঘদিন ধরে পোশাক খাতের ব্যবসা করছেন। বিজিএমইএর সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র রাজনীতি করতেন। ফলে তাঁর বিজিএমইএর মতো একটি সংগঠন পরিচালনা করার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা মোটেই ঠিক নয়।

এদিকে নতুন মেরুকরণে অনেকটা নতুন করে সুর উঠেছে বর্তমান কমিটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়েও। জানা যায়, সাধারণ সদস্যরা আবারও তাঁকে রেখে দিতে চায়। তাঁরা মনে করে, সম্প্রতি তৈরি পোশাক খাতের ভবন নিয়ে জটিলতা আর আন্তর্জাতিক বাজারের দরপতনে পোশাক খাতের দুঃসময়ে সরকার থেকে দাবি আদায় করতে পেরেছেন তিনি। এ ছাড়া সংস্কার চাপে থাকা ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলো যখন বন্ধ হতে চলছে তখন তিনি তাঁদের খুব কাছ থেকে সহায়তা করার চেষ্টা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির কালের কণ্ঠকে বলেন, বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতির নেতৃত্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পেরেছি আমরা। সেই হিসেবে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে কেই কেউ বর্তমান কমিটির সভাপতির নেতৃত্ব আবার আশা করেন। তবে এ ব্যাপারে বর্তমান সভাপতির কোনো আগ্রহ নেই। তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর নতুন ভবনের জন্য সরকারের কাজ থেকে প্রায় অর্ধেক মূল্যে জমি পাওয়া, এনবিআর থেকে উেস কর এবং করপোরেট কর কমিয়ে আনার ব্যাপারে বর্তমান সভাপতির নেতৃত্বে এ পরিষদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

এদিকে বিজিএমইএর একজন উদ্যোক্তা তানিয়া রহমান বলেন, ‘সমঝোতার পক্ষে থাকা বর্তমান কমিটি এরই মধ্যে আগামী মেয়াদের জন্য সভাপতিও বাছাই করে ফেলেছে বলে জানা গেছে। সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে একজনের নামও ইতিমধ্যে চলে এসেছে। তবে আমাদের দাবি সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে পোশাক খাতকে। তাই সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই সমঝোতার কমিটি মেনে নেওয়া যায় না। যেকোনো উপায়ে হোক ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করতে হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরাসরি ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here