নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণে পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিরা দরকষাকষি শুরু করেছেন। তাদের আলোচনা অনুযায়ীই সম্ভাব্য মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করবে মজুরি বোর্ড। এ কাজ সহজ করতে বোর্ডের পর্যালোচনার আগেই মালিক-শ্রমিকের সমঝোতার ভিত্তিতে চূড়ান্ত মজুরি প্রস্তাবনা চায় বিজিএমইএ। এছাড়া দাবি নিয়ে শ্রমিকরা যেন পথে না নামেন, সে বিষয়েও নিশ্চয়তা চাচ্ছে সংগঠনটি।
চলতি মাসেই তৈরি পোশাক শিল্পের চতুর্থ মজুরি বোর্ড ঘোষণা করেছে সরকার। তৃতীয় মজুরি বোর্ড গঠনের পাঁচ বছর না পেরোতেই মালিকপক্ষের অনুরোধে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ঘোষিত মজুরি কাঠামোর কার্যকারিতার মেয়াদ থাকতেই শ্রমিকদের আন্দোলন এড়াতে এবার আগে থেকেই মজুরি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে মালিকপক্ষ জানিয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন মজুরি কাঠামো সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
এদিকে বোর্ড গঠনের পর শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মজুরি নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেয় বিজিএমইএ। নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণে দরকষাকষিই এ বৈঠকের অন্যতম লক্ষ্য। গতকাল বিজিএমইএ ভবনে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ও শ্রমিক সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) মধ্যে। বৈঠকে বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম বিষয় ছিল বোর্ডে পর্যালোচনা হওয়ার আগেই মজুরি প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিজিএমইএ নেতারা চাচ্ছেন শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে বোর্ডে পর্যালোচনার আগেই মজুরি প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করতে। তাদের দাবি, আলোচনার মাধ্যমে বোর্ড পর্যালোচনার আগেই যদি শ্রমিক ও মালিকপক্ষ প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করতে পারেন, তবে মজুরি বোর্ডের জন্য সিদ্ধান্তে আসা সহজ হবে। কারণ মালিক ও শ্রমিকপক্ষ যদি একটি কাঠামোয় আগেই সম্মত হয়ে বোর্ডে যান, তাহলে নতুন কাঠামো নিয়ে বোর্ডের পর্যালোচনাও দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
জানতে চাইলে আইবিসি সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান বলেন, বিজিএমইএ চাচ্ছে মজুরি কাঠামো নিয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের দূরত্ব যেন আগেভাগেই কমে আসে। এ কারণে মজুরি বোর্ডে যাওয়ার আগেই একটি কাঠামোয় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা কোনো চূড়ান্ত মত দিইনি। কারণ বোর্ডে যাওয়ার আগে নতুন কাঠামোর বিষয়ে সমঝোতায় আসা যায় না।
তৌহিদুর রহমান আরো বলেন, গতকালের বৈঠকে আমরা জানিয়েছি, আইবিসির দাবি নিম্নতম মোট মজুরি হবে ১৬ হাজার টাকা। এছাড়া ২০১৬ সালে আশুলিয়ায় শ্রম অসন্তোষের ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তিরও আহ্বান জানানো হয়েছে। আর বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, মজুরির দাবি নিয়ে আমরা যেন প্রচার-প্রচারণা না করি; আমরা যেন পথে না নামি।
বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা গতকাল একটি শ্রমিক ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। পোশাক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী বাস্তবসম্মত একটি কাঠামো নির্ধারণে আমরা শ্রমিক প্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়েছি।
প্রতি বছর ডিসেম্বরে পোশাক শিল্পঘন এলাকায় মজুরি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। মজুরি বোর্ড গঠনের সময়ে শ্রমিকদের আন্দোলনের ব্যাপ্তিও বেড়ে যায়। এ অসন্তোষ ও আন্দোলন এড়ানোর লক্ষ্যে শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনায় মজুরি বোর্ড গঠনের আহ্বান জানিয়ে গত ৮ নভেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় বিজিএমইএ। এতে সাড়া দিয়ে বোর্ড গঠনে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নাম চেয়ে পাঠায় মন্ত্রণালয়।
চলতি মাসের ২ তারিখে পোশাক খাতের প্রায় অর্ধশত শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রম মন্ত্রণালয়। এরপর ১৪ জানুয়ারি বিজিএমইএ প্রতিনিধি ও গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রম মন্ত্রণালয়। বৈঠকের পর পোশাক শিল্পের চতুর্থ মজুরি বোর্ডে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের চূড়ান্ত নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন বোর্ডে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মালিকদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করবেন জাতীয় শ্রমিক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সামছুন্নাহার ভূঁইয়া।
বিজিএমইএ প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, এর আগে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের পর মজুরি বোর্ড ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছি আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। কারণ শ্রমিকরা আমাদেরই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি থাকলে শ্রমিকের প্রয়োজন আছে। আবার যেহেতু দেশে শ্রমিক আছে, তাই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিরও প্রয়োজন আছে। মালিকপক্ষ হিসেবে আমরা নিজেরাই যদি আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী একটা মজুরি কাঠামো দাঁড় করাতে পারি, সেটা আমাদের জন্য ও আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্যও ভালো।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৩ সালে পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনা করা হয়। সে বছর অদক্ষ শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি ৩ হাজার ২০০ থেকে বৃদ্ধি করে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।