চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পণ্য রপ্তানি আয়ে বেশ ভালো করেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধির এ হার স্বস্তিদায়ক। আলোচ্য সময়ে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, হোম টেক্সটাইল ইত্যাদি পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। তবে দ্বিতীয় প্রধান খাত চামড়ার রপ্তানি আয় কমেছে, যদিও ব্যাগ, জুতা ইত্যাদি চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আগের চেয়ে বেশি হয়েছে।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বৃহস্পতিবার রপ্তানি আয়ের ছয় মাসের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, এ সময়ে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭৯২ কোটি ডলার, যা বছরের শুরুতে ঠিক করা লক্ষ্যের চেয়ে কিছুটা বেশি।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি আয় বেড়েছিল ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। ওই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সে তুলনায় এ বছরের প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। এ বছর সরকারের পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি।
সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৩১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। অবশ্য লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম।
দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। আলোচ্য সময়েও সার্বিকভাবে মোট রপ্তানি আয়ের সাড়ে ৮২ শতাংশ এসেছে পোশাক খাত থেকে। ছয় মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আগের বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথমার্ধে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিকে আমি ভালোই বলব। তবে গত বছরের আগের বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এ প্রবৃদ্ধি ভালো নয়। আমাদের লক্ষ্য কমপক্ষে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী ছয় মাসও ভালো যাবে। তবে চ্যালেঞ্জের বছর হবে ২০১৮-১৯ অর্থবছর। জাতীয় নির্বাচন পড়বে আগামী অর্থবছরে। পাশাপাশি পোশাক খাতে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন হবে।’
চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে গেঞ্জিজাতীয় নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৭৬০ কোটি ডলার, এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। অন্যদিকে প্যান্ট-শার্ট ইত্যাদি ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে প্রায় ৭১৮ কোটি ডলার, এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ। নিটের চেয়ে ওভেনে প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে মাহমুদ হাসান খান বলেন, এর কারণ মূলত রপ্তানিতে সময় বেশি লাগা। কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ওভেন পোশাকের কাপড়ের জন্য বাংলাদেশকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এখন বন্দরে জাহাজজট লেগেই থাকে। এতে সময় বেশি লাগে।
রপ্তানি আয়ে দ্বিতীয় প্রধান খাত চামড়া ভালো করতে পারছে না। ছয় মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৬২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কম। কিন্তু চামড়ার জুতা রপ্তানি আয় সাড়ে ৮ শতাংশ বেড়েছে।
রপ্তানি আয়ে বেশ ভালো করছে পাট খাত। সব মিলিয়ে পাট খাতে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৫৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ২১ শতাংশ বেশি।
ঘুরে দাঁড়িয়েছে হোম টেক্সটাইল খাতও। এ খাতে প্রায় ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আয় হয়েছে প্রায় ৪১ কোটি ডলার। হিমায়িত খাদ্যও মোটামুটি ভালো করেছে। এ খাতে ৩১ কোটি ডলার আয় হয়েছে, আগের বছরের প্রথম ছয় মাসের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। আলোচ্য সময়ে সার্বিকভাবে কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে ৩১ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ। চামড়া বাদে অন্যান্য ফুটওয়্যার রপ্তানি আয় হয়েছে ১৩ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওষুধকে চলতি বছরের বর্ষ পণ্য ঘোষণা করেছেন। এ খাতে ছয় মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি।