আগামী দুই বছরের জন্য নেতৃত্ব নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করেছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। আগের মতো এবারের নির্বাচনেও সমঝোতার পথেই হাঁটছে সংগঠনটিতে সক্রিয় দুটি জোট সম্মিলিত ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ। সমঝোতা অনুযায়ী, আগামী মেয়াদের পর্ষদে সম্মিলিত ফোরামের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। বিজিএমইএর সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে ফোরাম থেকে রুপা ফ্যাশনসের কর্ণধার শহীদুল ইসলামের কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
১৮ ডিসেম্বর ২০১৭-১৮ সালের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে বিজিএমইএ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ মার্চ বিজিএমইএর ৩৫ পরিচালক পদে নির্বাচন হবে। নির্বাচিত পরিচালকরা ১৫ মার্চ একজন সভাপতি ও সাতজন সহসভাপতি নির্বাচন করবেন। ২২ মার্চ সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভায় নির্বাচিতরা দায়িত্ব বুঝে নেবেন।
তফসিল অনুযায়ী, ৭ মার্চ সকাল ৮টা থেকে কোনো বিরতি ছাড়াই বিকাল ৪টা পর্যন্ত পরিচালক পদে ভোটগ্রহণ চলবে। বরাবরের মতো এবারো ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ অফিসের নুরুল কাদের অডিটোরিয়াম এবং চট্টগ্রামের খুলশির ঝাউতলায় সংগঠনের কার্যালয় ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহূত হবে। ওইদিনই ভোট গণনা শেষে ফল ঘোষণা করা হবে। ফল নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে ১১ মার্চের মধ্যে নির্বাচনী আপিল বোর্ডে আবেদন করতে হবে। আপিল নিষ্পত্তি করে ১৩ মার্চ নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডকে জানাবে আপিল বোর্ড। পরদিন চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে। একইভাবে সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচন নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে ১৯ মার্চের মধ্যে আপিল করতে হবে। ২১ মার্চের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করা হবে এবং ওইদিনই চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে। পরদিন দায়িত্ব বুঝে নেবে নতুন কমিটি।
বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনের সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে তিনজনের নাম প্রস্তাব করেছিল সম্মিলিত ফোরাম। তারা হলেন মোহাম্মদী গ্রুপের রুবানা হক, রুপা ফ্যাশনসের শহীদুল ইসলাম ও ইভিন্স টেক্সটাইলসের আনোয়ার উল আলম চৌধুরি পারভেজ। তবে গত সপ্তাহে এক বৈঠকে শহীদুল ইসলামকে সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে ফোরামের প্রতিনিধি করার পক্ষে মত দিয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতিরা। যদিও তার নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আরো আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এ বিষয়ে শহীদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আড়াই বছর আগে যখন বর্তমান পর্ষদের নির্বাচন হয়, তখন সম্মিলিত ফোরাম, সম্মিলিত পরিষদ ও সাবেক সভাপতিরা সিদ্ধান্ত নেন যে, আগামী নির্বাচনগুলোয় আমরা সমঝোতার ভিত্তিতে আগাব। সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পর্ষদে এক মেয়াদে সম্মিলিত পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে আরেক মেয়াদে সম্মিলিত ফোরামের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে। সেই সমঝোতা অনুযায়ী বর্তমানে সম্মিলিত পরিষদ দুই বছর ও অতিরিক্ত ছয় মাস নেতৃত্ব দিচ্ছে। এখন ফোরাম নেতৃত্ব দেবে। আর ফোরাম থেকে আমার নাম সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিজিএমইএতে আমি অনেক আগে থেকেই সক্রিয়। এর আগে দুই বছর পরিচালক হিসেবে বিজিএমইএর নেতৃত্বে ছিলাম। পরপর দুই মেয়াদে মোট চার বছর আমি ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমি বিজিএমইএর হয়ে পোশাক খাতের জন্য কাজ করেছি।
পোশাক খাত ও সংগঠনের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের ভাবনার কথাও জানান বিজিএমইএর এ সম্ভাব্য সভাপতি। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা খুব কঠিন সময় অতিক্রম করছি। ব্যবসায় আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তা এ সময়টাকে শক্তভাবে মোকাবেলা করতে হবে। অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স বর্তমান সময়ে একটি বড় বিষয়। আরো আছে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা। সবকিছু মিলিয়ে আগামী সময়টা অনেক চ্যালেঞ্জিং। এ সময়টা যেন সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে পারি, সে উদ্যোগ নিয়ে এগোতে হবে।
আগামী মেয়াদে পোশাক খাতের জন্য কী পরিকল্পনা করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে শহীদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদ অনেক কাজ করেছে। কিছু কাজে সফল হয়েছে, কিছু কাজে হয়নি। ইতিবাচক প্রচেষ্টায়ই সবাই কাজ করেছেন। বর্তমানে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। একটি কাঠামোর মধ্যে পোশাক খাতকে তাদের খবরদারিমুক্ত করাই আমার মূল লক্ষ্য হবে। এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি পর্যালোচনায় ইতিবাচক ভূমিকাসহ কল্যাণের কাজও অব্যাহত রাখব বলে আশা করছি।